মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থী পরিষদের আন্দোলন, অবরুদ্ধ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করছেন ! জেনে নিন ক্ষতি কতটা ! সব হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ঘোষণা চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, জরুরি বিভাগসহ সব সেবা বন্ধ ঢামেকে চিকিৎসা সেবায় অবহেলা করলেই আইনানুগ ব্যবস্থা -স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ স্বাস্থ্যের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন ছড়িয়ে পড়ছে এমপক্স ভাইরাস, বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ডব্লিওএইচওর ঢাকা মেডিকেলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ! পঞ্চগড়ে আন্তর্জাতিক মানের সুপার-স্পেশালিটি হেলথ-কেয়ার “নর্থ পয়েন্ট মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল-এনপিএমসিএইচ” বাজারে ৬৫ হাজার টাকার ‘ভুয়া’ ক্যান্সার ইনজেকশন

চিকিৎসকদের বেকারত্ব এড়াতে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সমাধান হতে পারে

২০২৬ সালে বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজারের মতো চিকিৎসক বেশি তৈরি হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ এত পরিশ্রম করে পড়াশোনা করার পরও অনেক চিকিৎসক বেকারত্ব বরণ করবেন।

একসময় স্কুলের প্রথম সারির স্টুডেন্টদের স্বপ্ন থাকতো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। বিকশিত মস্তিষ্কে শিক্ষক, পিতা-মাতা, সমাজের মানুষ এই স্বপ্ন লালন করে দিতেন। চিকিৎসা পেশা মানবসেবা হিসেবে অতুলনীয়, খুবই সম্মানের ও তৃপ্তিদায়ক হওয়ার কথা কিন্তু বর্তমানে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা সন্তানদের বড়ো করছি না। বেশি বেশি অর্থ কামাই করা এবং সামাজিকভাবে লোক দেখানোটাই বড় ইস্যু হয়ে গেছে। এই কারণে বিসিএস ক্যাডার চিকিৎসা পেশার চেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। কেননা, এতে ক্ষমতা, ভালো বেতন ও দুর্নীতির মাধ্যমে রয়েছে সীমাহীন অর্থ কামাইয়ের সুযোগ(অসুস্থ মানসিকতা)।

৩২ বছর  আগে (১৯৯০ সালের দিকে) মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ছিলো মাত্র ৮টা। বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট মিলে এর সংখ্যা হচ্ছে ১০৯টা। ডেন্টাল কলেজ প্রায় ৪০টার মতো। ২০১৬ সালের সরকারি জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রয়োজনের তুলনায় ১১ হাজারেরও বেশি চিকিৎসক ছিলো। সেই সময় দেশে প্রতি ১৮৪৭ জন মানুষের জন্য চিকিৎসক ছিলো একজন। সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলো প্রতি ৬,৫৭৯ জনে একজন। ২০২৬ সালে দেশে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজারের মতো চিকিৎসক বেশি তৈরি হতে যাচ্ছে।  অর্থাৎ এত পরিশ্রম করে পড়াশোনা করার পরও অনেক  চিকিৎসক বেকারত্ব বরণ করবে।

দেশে মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের প্রফেশনাল ক্যারিয়ার তৈরি করতে অনেক বেগ পেতে হয়। এর অন্যতম কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে সিনিয়র চিকিৎসকরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করেন। এতে নতুনদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। দেশে রোগীদের চিকিৎসা-ব্যবস্থার রেফারেল সিস্টেমও গড়ে ওঠেনি। পাস করা একজন চিকিৎসক মাত্র ১৫-২৫ হাজার টাকা দিয়ে জব শুরু করেন প্রাইভেট হাসপাতালে, ১০-১২ ঘন্টা খাটতে হয়।

নিকট ভবিষ্যতে এই অবস্থা থেকে মুক্তির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। চিকিৎসকরা স্পেশাল বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগদান করে খুবই নোংরা পরিবেশের মধ্যে চিকিৎসা সেবা দেন। সত্যি কথা বলতে কি, এমন পরিবেশে স্বাভাবিক কাজ করাটাই কঠিন। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে চিকিৎসকদের মাসিক পারিশ্রমিক অন্য পেশার চেয়ে আলাদা। ভিন্ন বেতন স্কেলে তারা সম্মানি পান। আমাদের দেশে চিকিৎসকদের সেভাবে সম্মানিত করা হয় না। চিকিৎসকরা মানুষের জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সেবা প্রদান করে। তাই প্রথাগত কারণেই একজনকে চিকিৎসক হতে অনেক খাটতে হয়, পড়াশোনা করতে হয়।

মেডিকেল কারিকুলামও অত্যন্ত সেকেলে, লিডারশিপও তৈরি হচ্ছে না। সবকিছু মিলে দেশের নবীন চিকিৎসকরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। মেডিকেল ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রসঙ্গত, কোভিডের সময় অনেক মেডিকেল শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।

উন্নত বিশ্বে মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের অনেক চাহিদা। গবেষণার ক্ষেত্রেও অনেক সুযোগ। বিশেষ করে, মলিকিউলার, লাইফ সায়েন্স, ক্লিনিক্যাল, পাবলিক হেলথ এবং বায়োমেডিকেল সেক্টরে। তারা অন্যান্য সেক্টরের গ্রাজুয়েটদের চেয়ে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা সঙ্গত কারণেই, কিন্তু দেশের নবীন চিকিৎসকরা নিজেদের ক্যারিয়ার অপশন নিয়ে অতটাও সচেতন নন। দেশে ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত না হয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা একটি ভালো ও বিকল্প ক্যারিয়ার গঠনে জোরদার ভূমিকা রাখতে পারে।

সুত্রঃ ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন এর “বিসিএস নাকি বিদেশে উচ্চশিক্ষা” – বই থেকে নেওয়া।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ ফলো করুন

Categories