যেসব নবজাতক আড়াই কেজির কম ওজন নিয়ে জন্মায়, তাদের কম ওজনবিশিষ্ট বা লো বার্থ ওয়েট শিশু বলা হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৩০ শতাংশ নবজাতক কম ওজন নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়।
এসব কম ওজনবিশিষ্ট নবজাতকের স্বাভাবিক জন্ম ওজন নিয়ে জন্মানো নবজাতকের তুলনায় সংক্রমণ ও অন্যান্য কারণে মৃত্যুহার বেশি। পরে বুদ্ধি ও বিকাশজনিত সমস্যায় ভোগার ঝুঁকিও তাদের বেশি। কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া নবজাতকের চাই বিশেষ যত্ন।
এদের দেহের তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যেতে পারে। তাই জন্মের পরপর তাপমাত্রার সুরক্ষা দরকার, যা প্রসবকক্ষেই ব্যবস্থা থাকতে হবে। যেসব নবজাতকের জন্ম ওজন ১৮০০ গ্রামের কম, গর্ভকাল ৩৪ সপ্তাহের নিচে জন্মেছে বা জন্মের পরপর মায়ের স্তন্যপান করতে পারেনি, তাদের জন্য স্পেশাল কেয়ার ইউনিট ব্যবস্থাপনা লাগতে পারে। এসব শিশুর জন্মের পর গোসল করানো উচিত নয়। গোসল বা পরিষ্কার করতে একটু দেরি করতে হবে, অন্তত এক সপ্তাহ।
তাপমাত্রার সুরক্ষার জন্য ইদানীং ক্যাঙারু কেয়ার পদ্ধতিতে নবজাতককে মায়ের ত্বকের সঙ্গে রেখে দেওয়াতে বেশ সুফল মিলছে। এ ছাড়া তিন–চার প্রস্থের পোশাক পরিয়ে সঙ্গে মাথায় টুপি, হাত-পায়ের মোজা এসবের মাধ্যমে তাপমাত্রা বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়।
যত দ্রুত মায়ের বুকের দুধ পান শুরু করানো যায় ততই মঙ্গল। যদি শিশু বুকের দুধ পানে অসমর্থ থাকে, তবে নলের সাহায্যে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে, কিন্তু তোলা দুধ বা কেনা দুধ নয়। এতে ক্ষতির আশঙ্কা আরও বেশি। ন্যূনতম ১২ মাস বয়স পর্যন্ত এসব শিশুর বাড়তি ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও আয়রন দরকার হয়।
স্বাভাবিক ওজনের নবজাতকের মতোই সময়সূচি মেনে তার টিকাদান চলবে। ওজন কম বলে বা প্রি–ম্যাচিউর বলে দেরিতে শুরু করার নিয়ম নেই।
এদের সংক্রমণ বেশি হয়, তাই শিশুর পরিচর্যাকারীর পরিচ্ছন্নতা জরুরি। কেউ বাইরে থেকে এলে অবশ্যই পরিষ্কার হয়ে ধরবেন। অতিরিক্ত অতিথি না থাকাই ভালো।
এসব শিশুর ঘন ঘন সংক্রমণ, র’ক্তশূন্যতা, বুদ্ধির বিকাশ, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তির প্রয়োজনীয় পরীক্ষা বা মনিটরিং ১২-১৮ মাস পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে। কোথাও পিছিয়ে পড়ছে কি না নজর রাখতে হবে। তবে যথাযথ পুষ্টি ও যত্ন পেলে আর সব নবজাতকের মতোই এরা দ্রুত বেড়ে উঠবে।