ঢাকা: বিনামূল্যে ২৪ লাখ মানুষকে কলেরার টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে টিকা কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। এই কর্মসূচি চলবে ২৬ জুন থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত।
রোববার (২৬ জুন) রাজধানীর আইসিডিডিআর,বির সাদাকাওয়া মিলনায়তনে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কলেরা টিকাদান এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
গর্ভবর্তী নারী এবং যারা বিগত ১৪ দিনের মধ্যে অন্য কোনো টিকা নিয়েছে ও এক বছর বয়সের বেশি সবাই ওই টিকা নিতে পারবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন বলেন, ঢাকায় প্রথমবারের মতো মুখে খাওয়া ভ্যাকসিন দিচ্ছি। পোলিও-টিটেনাস নির্মূল হয়েছে, কলেরাও হবে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালে একটি ডায়রিয়া-কলেরা ইউনিট করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দেশে ১শ কোটি টাকা গবেষণাখাতে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল ও আইসিসিডিডিআর’বিতে এখন গবেষণা হচ্ছে। গবেষণার পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কলেরার টিকা আবিষ্কারে ড. কাদরী দারুণ কাজ করেছেন জানিয়ে তাকে এ সময় অভিনন্দিত করেন মন্ত্রী।
আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র গবেষক ফেরদৌস কাদেরী বলেন, আইসিডিডিআর,বিতে ১৮-২০ শতাংশ ডায়রিয়া রোগী আসেন তার মধ্যে ২০ শতাংশ কলেরা রোগী। কলেরায় দেশে মৃত্যুর হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
দেশে প্রতি মিনিটে একজন কলেরায় আক্রান্ত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণত দেশে এপ্রিল থেকে মে, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর, বছরে এই দুই বার তীব্র ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এবছর ঢাকার মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক গুণ বেশি ছিল। আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রোগীর বসবাস ঢাকার যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, সবুজবাগ, মোহাম্মদপুর এবং মিরপুর এলাকায়। এ সময়ে, কলেরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল জানায় এ গবেষক।
ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ অসাধারণ কাজ করেছে কোভিড নিয়ন্ত্রণে। ওরাল কলেরা ভ্যাকসিনেও বাংলাদেশে অনেক বড় প্রভাব পড়বে।
দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর মতো বড় পদক্ষেপ না হলেও অনেক বড় পদক্ষেপ।
ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, কলেরা রোগীকে পানি খেতে দেওয়া হবে না এমন কুসংস্কার ছিল। পানি ও নিউট্রেশনের অভাবে মারা যেতো। কিন্তু আমরা স্বল্প ব্যয়ে কলেরার মৃত্যু খুবই কমে এসেছি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মিরপুরের শিশু শবনম ফারিয়াকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এ কর্মসূচিতে যাত্রাবাড়ীর প্রায় ৫ লাখ, সবুজবাগের প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার, দক্ষিণখানের প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার, মিরপুরের প্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার এবং মোহাম্মদপুরের প্রায় ৪ লাখ অধিবাসীকে কলেরার টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। প্রায় ৭শটি টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, এবং ড. তাহমিদ আহমেদ।