মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করছেন ! জেনে নিন ক্ষতি কতটা ! সব হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ঘোষণা চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, জরুরি বিভাগসহ সব সেবা বন্ধ ঢামেকে চিকিৎসা সেবায় অবহেলা করলেই আইনানুগ ব্যবস্থা -স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ স্বাস্থ্যের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন ছড়িয়ে পড়ছে এমপক্স ভাইরাস, বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ডব্লিওএইচওর ঢাকা মেডিকেলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ! পঞ্চগড়ে আন্তর্জাতিক মানের সুপার-স্পেশালিটি হেলথ-কেয়ার “নর্থ পয়েন্ট মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল-এনপিএমসিএইচ” বাজারে ৬৫ হাজার টাকার ‘ভুয়া’ ক্যান্সার ইনজেকশন দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে

কণ্ঠস্বর সুস্থ রাখতে করণীয়?

গলায় ক্যানসার হয়েছে। ল্যারিঞ্জিয়াল ক্যারসিনমা, কণ্ঠস্বর ভাঙ্গা। চিকিৎসার জন্য ডাক্তার বলেছেন ভয়েসবক্স কেটে ফেলে দিতে হবে এমন অবস্থায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় রোগী এবং রোগীর মানুষজন কণ্ঠের চেয়ে জীবন বড় এবং যন্ত্র নির্ভর কণ্ঠস্বর পাওয়া যাবে তাতেও যেনো একটু স্বস্থি। অসুস্থতা বা কোনো কারণে একদিন কথা বন্ধ থাকলেই বোঝা যায় কণ্ঠের গুরুত্ব। তাই নিয়ম করে কিভাবে সুস্থ রাখা যায়, তা জেনে নেওয়া উচিত। 

গলার সামনে স্বরযন্ত্র (ল্যারিংস) অবস্থিত। এতে দুটি কণ্ঠনালি (ভোকাল কর্ড) থাকে। এই নালি দুটির কম্পনের মাধ্যমে শব্দ তৈরি হয়। এবং সেই শব্দ হাইপোফ্যারিংস মুখগহব্বর জিহ্বা, তালু,দাঁত, নাক ও ঠোটের সাহায্যে তৈরি হয় অর্থবোধক বাক্য। 

লক্ষণ

কণ্ঠ মানুষের একটি ইউনিক আইডেনটিটি, কণ্ঠস্বর শুনেই আমরা পারসনকে চিনতে পারি। কণ্ঠনালির সমস্যার লক্ষণ হলো কণ্ঠস্বর পরিবর্তন, কাশি, কিছু গিলতে অসুবিধা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। যদি ঘন ঘন কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয় বা দুই সপ্তাহে ভালো না হয়, তবে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ৪০ উর্ধে কারো দুই বা তিন সপ্তাহের অধিক স্বরভঙ্গ থাকলে ধরে নিতে হবে বড় কোন রোগের লক্ষণ।

পর্যাপ্ত পানি

কণ্ঠ সুরকে শ্রুতিমধুর রাখতে হলে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন তিন থেকে চার লিটার পানি পান করা আবশ্যক।

ঠাণ্ডা পানি পরিহার

কণ্ঠ সুস্থ রাখতে ঠাণ্ডা পানি পরিহার করতে হবে। অনেক সময় গরমের মধ্যে বাইরে থেকে এসে হুট করেই আমরা ঠাণ্ডা পানি পান করি, যা আমাদের গলার জন্য ক্ষতিকর। হঠাৎ ঠাণ্ডা পানি পান করলে গলা বসে যেতে পারে, এতে কণ্ঠের স্বাভাবিক সুরের ব্যত্যয় ঘটে।

উচ্চস্বরে কথা বলা পরিহার

জোরে চিৎকার করে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া কোনআন তেলাওয়াতের সময়ও আমাদের দেশের হাফিজ সাহেবরা কণ্ঠস্বরের উঠা-নামা বেশী করেন বলে অনেকেরই ভোকাল নডিউল লক্ষ করা যায়। গানের মধ্যে স্বরের বিভিন্ন পরিবর্তনের ফলে অনেকের ভোকাল নডিউল হয়।

পানি দিয়ে গড়গড়া করুন

সকালে, বিশেষ করে ঘুম থেকে ওঠার পর গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করে গলা পরিষ্কার করে নিতে পারেন। বেশি জোরে গড়গড়া করতে যাবেন না, প্রথমে ধীরে ধীরে গড়গড়া করে তারপর চাপ বাড়াতে থাকুন।

যষ্টিমধু

এটি গলার জন্য উপকারী। বিশেষ করে যাঁরা সংবাদ পাঠক, তাঁদের জন্য বেশ উপকারী। যষ্টিমধু নিয়মিত খেলে কণ্ঠ দৃঢ় ও পরিষ্কার হয়।

রোজ সকালে রেওয়াজ

কণ্ঠকে শ্রুতিমধুর করতে এর পেছনে সময় ও পরিশ্রম দুই-ই ব্যয় করতে হবে। বিশেষ করে যাঁরা সংগীতশিল্পী, তাঁরা প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন রকমের কণ্ঠের ব্যায়াম ও রেওয়াজ করতে পারেন। এ ছাড়া সেমিনারে কিংবা অফিসের কোনো অনুষ্ঠানে কথা বলতেও কণ্ঠকে প্রতিদিন রেওয়াজের মধ্যে রাখুন।

ঘেমে না থাকা

সারা দিন কাজকর্মে, চলাফেরায় ঘাম হয়; কিন্তু বেশিক্ষণ ঘামে ভেজা অবস্থায় থাকা যাবে না। বিশেষ করে ঘাম অনেকক্ষণ ধরে শরীরে থাকলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।

ধূমপান পরিহার

কণ্ঠ সুস্থ রাখতে কিছু বদ-অভ্যাস পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে ধূমপান গলার স্বর পরিবর্তন করে দিতে পারে। ধূমপানের কারণে কণ্ঠে বিভিন্ন রোগ দানা বাঁধে। কণ্ঠই যদি হয় জীবিকা চালানোর অবলম্বন, তাহলে ধূমপানসহ অন্যান্য মাদক সেবন থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।

কণ্ঠনালির বিশ্রাম

দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দেয়া উচিত, যা কণ্ঠনালির অবসাদ দূর করে এবং শক্তি ফিরিয়ে দেয়। নিজের কণ্ঠকে শুনুন এবং যদি কোনো উপসর্গ থাকে বা পরিবর্তন লক্ষ করেন, তাহলে যথাযথ যত্ন নিন।

কণ্ঠনালির অপব্যবহার

জনসমাবেশ, কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে জোরে কথা বলা, অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় ফোনে কথা বলা ঠিক নয়। ঘাড় ও কানের মধ্যে ফোন চেপে ধরে কথা বলায় ঘাড় ও স্বরযন্ত্রের মাংসপেশিতে টান লাগে। উচ্চৈঃস্বরে বা চিৎকার করে কথা বলা, জনসমাবেশে বা বড় লেকচার গ্যালারিতে মাইক ছাড়াই জোরে কথা বললে কণ্ঠনালির ওপর বেশি চাপ পড়ে।

কণ্ঠস্বরের অতিব্যবহার

যখন কথা বলা হয়, তখন কণ্ঠনালির সঙ্গে এর আশপাশে অবস্থিত মাংসপেশিরও সাহায্য লাগে। কণ্ঠনালি সঠিক ও নিয়মের বাইরে ব্যবহার করা, অতি উচ্চৈঃস্বরে বা অতিরিক্ত কথা বলা, দীর্ঘমেয়াদি বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বললে কণ্ঠনালির প্রদাহ দেখা দিতে পারে, যা ভারী জিনিসকে ঠিকভাবে না ওঠানোর জন্য পিঠে ব্যথা হওয়ার মতো। গলা ও স্বরযন্ত্রের মাংসপেশির সংকোচন এবং কথা বলার সময় ঠিকভাবে শ্বাস না নিলে শ্বাসযন্ত্রের অবসাদ হয়, কথা বলতে কষ্ট হয়। ফলে কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে এবং কণ্ঠনালিতে পলিপ বা নডিউল, এমনকি রক্তক্ষরণও  হতে পারে।

ডা. নূরুল হুদা নাঈম,
সহকারী অধ্যাপক, 
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ ফলো করুন

Categories