জন্মদিন পালনের কথা বলে হোটেলে নিয়ে নারী চিকিৎসককে হত্যা : র্যাব
বর্ণাঢ্যভাবে জন্মদিন পালন করার প্রলোভন দেখিয়ে নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীকাকে (২৭) আবাসিক হোটেলে এনে হত্যা করে তার স্বামী রেজাউল রেজা।
আজ শুক্রবার (১২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে রেজাউল রেজার সাথে ভিকটিম নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীকার (২৭) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে প্রেমের সূত্র ধরে ২০২০ সালের অক্টোবরে তারা দুজন পালিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন। শুধুমাত্র ভালোবাসার কারণে ভিকটিম তার পরিবারের অমতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
ভিকটিম চিকিৎসকের সাথে সম্পর্ক থাকাকালীন সময়ে গ্রেপ্তার রেজার একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ভিকটিম নারীর সাথে রেজার বাক বিতণ্ডা হয়। মাঝেমধ্যে এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হতো। গত ১০ আগস্ট বর্ণাঢ্যভাবে জন্মদিন পালন করার প্রলোভন দেখিয়ে ভিকটিম নারী চিকিৎসককে আবাসিক হোটেলে এনে হত্যা করা হয়।
গত বুধবার রাতে রাজধানীর পান্থপথের আবাসিক হোটেলে নারী চিকিৎসকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রেজাউল রেজাকে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি মেস থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
প্রেস ব্রিফিং-এ র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পর্যালোচনা করে অনুধাবন করেন রেজাউল রেজা একজন কুরুচিপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি বিকৃত মানসিকতা ধারণ করেন। আজ শুক্রবার (১২ আগস্ট) ভিকটিম নারী চিকিৎসকের জন্মদিন ছিল।
অভিযুক্ত জানায়, ভিকটিমকে নিয়ে বাইরের একটি রেস্টুরেন্টে বর্ণাঢ্যভাবে জন্মদিন পালন করবে। তাই গত ১০ আগস্ট জন্মদিন পালনের প্রলোভন দেখিয়ে ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশে আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পরে বিভিন্ন কথাবার্তার কারণে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়।
র্যাব জানায়, মূলত হত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে তার ব্যাগ থেকে বহন করা ছুরি বের করে উপর্যপুরি আঘাত করে ওই নারীকে হত্যা নিশ্চিত করে রেজা।
প্রাথমিক র্যাব জানায়, রেজা বেশ কিছুদিন ধরে এই ছুরিটি বহন করছিল রেজা। তিনি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। হত্যার পর সে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় তার রক্তমাখা জামা খুলে গোসল করে অন্য জামা পরিধান করে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও পরিধানের জামা ব্যাগের ভিতরে নিয়ে বের হয়ে আসেন। ধস্তাধস্তি চলাকালীন সময়ে সে হাতে একটু আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে একটি মেডিকেল সেন্টার থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে এক নিকটাত্মীয়ের সহায়তায় একটি মেসে আশ্রয় নেন রেজা। তিনি কিভাবে এই হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেন, সেজন্য একজন আইনজীবীর সাথেও পরামর্শ করেন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
প্রসঙ্গত, রেজাউল ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ পাশ করার পরে একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। সেখান থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। জান্নাতুল রাজধানীর মগবাজার কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গাইনি বিষয়ের একটি কোর্সে পড়াশোনা করছিলেন।