মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করছেন ! জেনে নিন ক্ষতি কতটা ! সব হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ঘোষণা চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, জরুরি বিভাগসহ সব সেবা বন্ধ ঢামেকে চিকিৎসা সেবায় অবহেলা করলেই আইনানুগ ব্যবস্থা -স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ স্বাস্থ্যের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন ছড়িয়ে পড়ছে এমপক্স ভাইরাস, বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ডব্লিওএইচওর ঢাকা মেডিকেলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ! পঞ্চগড়ে আন্তর্জাতিক মানের সুপার-স্পেশালিটি হেলথ-কেয়ার “নর্থ পয়েন্ট মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল-এনপিএমসিএইচ” বাজারে ৬৫ হাজার টাকার ‘ভুয়া’ ক্যান্সার ইনজেকশন দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে

এনআইসিইউতে ফেনোবারবিটোন ওষুধের তীব্র সংকট

নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ব্যবহৃত একটি প্রয়োজনীয় ওষুধ ফেনোবারবিটোন। বাজারে এ গ্রুপের একাধিক ওষুধ থাকলেও সর্বাধিক প্রচলিত বারবিট। তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী এ ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম।

এনআইসিউতে নবজাতকের খিঁচুনি প্রতিরোধে ব্যবহার করা এ ওষুধটি গত ছয় মাস ধরে বাজারে সরবরাহ নেই। ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো বলছে, ওষুধটি এ মুহূর্তে মজুদ নেই। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বোর্ডের পাস সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এখন আমদানি করা যাচ্ছে না। তবে আগামী মার্চ মাসে আমদানি করা যাবে। তখন সংকট কেটে যাবে।

১৬ টাকার ইনজেকশন আটশ’ টাকায় বিক্রি

এ অবস্থায় ফার্মেসিগুলোতে ১৬ টাকার একটি বারবিট ইনজেকশন বিক্রি হচ্ছে ছয়শ’ থেকে আটশ’ টাকায়। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বহু গুণ বেশি দামে ক্রয় করতে গিয়ে সীমাহীন কষ্ট হচ্ছে রোগীদের এবং এনআইসিউতে চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে চিকিৎসকদের। আর ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো বলছে, সরবরাহ কম হলে তো দাম বাড়বে না। আমরা তো নির্ধারিত মূল্যেই বাজারজাত করেছি। তবে এতে ওষুধ বিক্রেতাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফেনোবারবিটাল ওষুধটি তিন ধরনের হয়ে থাকে। সিরাপ, ট্যাবলেট ও ইনজেকশন। দেশে মাত্র তিন-চারটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি ওষুধটি বাজারে সরবরাহ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, ‘ওষুধটি ডিসেম্বর পর্যন্ত স্টক ছিল। এ মুহূর্তে স্টকে নেই। যদিও বাজারে সংকট গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে।’

মার্চের আগে সংকট কাটছে না

ওষুধটি আমদানি করতে হয় জানিয়ে তারা বলেন, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট বোর্ডের পাস ছাড়া আমদানি করা সম্ভব নয়। কোম্পানির সাপ্লাই চেইন যতবার রপ্তানিকারক কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছেন, ততবার জানানো হয়েছে যে, মার্চের আগে তারা এটি দিতে পারবে না। যেহেতু সাপ্লাই নেই, তাই ফার্মেসি মালিকরা এ সুযোগে অনৈতিক কাজ করতে পারে। তবে তথ্য প্রমাণ পেলে ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে।

আমদানিকারক একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এটি ভারত থেকে আমদানি করা হয়। প্রতিটি ওষুধ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন। বেনিফিটের হিসাবে করে কোম্পানিগুলো আমদানি পাস দিয়ে থাকে। প্রতিবারই আমদানি করতে বোর্ডের অনুমতির প্রয়োজন হয়। বোর্ডের নিয়মানুযায়ী তিন থেকে চার মাসের ওষুধ আমদানি করা যায়। অনেক সময় ওষুধ চাওয়া হলে, বোর্ডের পাস পাওয়া যায় না। এখনও এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হঠাৎ কেনো তারা পাস দিচ্ছে না এবং বোর্ডের ভেতরে কি অবস্থা চলছে তা আমদানিকারকদের অজানা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বেক্সিমকো, অপসোনিন ও  জিএ কোম্পানির কেউই ওষুধটি আমদানি করতে পারছে না। গত চার বছর যাবত শুধু ইনসেপ্টা বারবিট সরবরাহ করছে। গত কয়েক মাস ধরে সরবরাহ বন্ধ। যেহেতু এটি শিশুদের জন্য খুবই দরকারি ওষুধ, তাই এটি আমদানি করতে গুরুত্বসহ চেষ্টা করছি আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘মার্চে আমরা এক বছরের স্টক নিয়ে আসবো। আগামী এক বছর আশা করি সরবরাহ সমস্যা হবে না। আমরা নির্ধারিত মূল্যেই বাজারজাত করেছি। অসাধু ফার্মেসি মালিকরা বেশি দাম নিতে পারে। এটির নিয়ন্ত্রণ কিন্তু আমাদের হাতে নয়। ফার্মেসি কি করছে, সেটি আমরা জানতেও পারছি না এবং আমরা কিছু করতেও পারছি না।’

রাজধানীর শাহবাগের একাধিক ফার্মেসি মালিক বলেন, ‘বেশ কিছু দিন যাবত বাজারে ফেনোবারবিটালের সরবরাহ নেই। এজন্য যেগুলো আছে, সেগুলো উচ্চদামে বিক্রি করছেন তারা। এটি অনৈতিক কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ক্রেতারা তো নিচ্ছে, তারা কিছু বলছেন না।’

প্রকৃত পক্ষে ক্রেতারা নিরুপায় হয়ে ওষুধটি চড়া মূল্যে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। দীর্ঘ সময় ধরে এ সমস্যা চলছে। কেউ কোনো কথা বলছেন না। সমাধানে নেই কোনো পদক্ষেপ।

অতিরিক্ত দামের কারণে চিকিৎসা ব্যাহত 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সারাদেশে কয়েকশ’ এনআইসিউ রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওষুধের দাম অতিরিক্ত হওয়ার কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান চিকিৎসকরা।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিওনেটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কুমার  বলেন, ‘নবজাতকের খিঁচুনি শিশুদের তুলনায় একটু বেশি হয়। বিভিন্ন কারণে এটি হয়। এ রোগ প্রতিরোধে সাশ্রয়ী ও তুলনামূলক কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ওষুধের নাম হলো ফেনোবারবিটাল।’

সরবরাহ কম নাকি কৃত্রিম সংকট

করোনাকালীন মাস্ক ও গ্লাবসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই দশগুণ বেশি দামে এসব জিনিস কিনেছি। সাম্প্রতিক সময়ে বারবিট ওষুধটি পেতে সমস্যা হচ্ছে। এটি কৃত্রিম সংকট, নাকি সরবরাহ কম বলতে পারছি না। তবে ওষুধটি ব্যবহারের জন্য আমরা অহরহ পাচ্ছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যখন একটি ড্রাগ প্রেসক্রিপশনে লিখি, তখন সিস্টেমেটিক রিভিউ দেখে লিখে থাকি। এখনও পর্যন্ত যে তথ্য প্রমাণ রয়েছে, এতে ফেনোবারবিটাল ঠিক আছে। সংকটের সময় এটির বিকল্প হিসেবে লেভেটিক ব্যবহার হচ্ছে। তবে এটিকে চিকিৎসার প্রথম লাইন হিসেবে এখনও জাতীয়ভাবে গ্রহণ করা হয়নি। এ ছাড়া ওষুধটি অহরহ না। ফেনোবারবিটাল ব্যতীত ব্যবহৃত অন্য ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বেশি। ফলে এনআইসিইউতে চিকিৎসা দিতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে এবং মানুষও ভোগান্তিতে পড়ছেন।’

ডা. সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘যখন ওষুধের সরবরাহ কমে যায়, তখন ফার্মেসি মালিকরা বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করতে চান। অভিভাবকরা আমাদের কাছেও অভিযোগ করেন যে, ওষুধটা পাওয়া যাচ্ছে না, দাম অনেক বেশি চাচ্ছে।’ 

একটি অভিযোগের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে স্কয়ার হাসপাতাল থেকে বিএসএমএমইউতে একজন রোগী আসছেন। সে রোগী ফেনোবারবিটাল পাননি। তখন তারা অন্য অপশনে চলে গেছেন (বেশি দামে কিনেছেন)। যারা বহন করতে পারেন, তাদের জন্য কষ্টকর কিছু না। তবে বাস্তবে ওষুধটির দাম একেবারেই কম, সবার জন্য ব্যবহারযোগ্য। এক কথায় বললে, কাজে ভালো, দাম কম।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে একটি বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এ বিষয়টিও আলোচনা করেছি। আমরা আশাবাদী বেশি দিন এ সংকট থাকবে না। এটি সমাধান হয়ে যাবে।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বক্তব্য

বিষয়টি নিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শুধু ফেনোবারবিটাল নয়, যে কোনো ওষুধ সরবরাহ কমে গেলে সেটি যদি আমরা জানতে পারি বা অভিযোগ আকারে আসে, তখন আমরা উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীকে সংশ্লিষ্ট ওষুধ বাজারে যাতে সহজলভ্য ও সহজে পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করার কথা বলি। যেমন-করোনাকালীন আমাদের কাছে এ রকম কিছু অভিযোগ এসেছিল, তখন আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি এবং সংশ্লিষ্টদের সরবরাহ বাড়ানো নির্দেশ দিয়েছি।’

সমস্য থেকে উত্তরণে বিকল্পে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। এরপর বিকল্প ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। যেমন প্যারাসিটামলের অনেক ওষুধ রয়েছে। একটি ঘাটতি হলে অন্যটি ব্যবহার করা হয়, তেমনি এটিরও বিকল্প তৈরি করতে হবে। চিকিৎসকরা বিকল্প ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখতে পারেন।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ ফলো করুন

Categories