শারীরিক দুর্বলতা কাটানোর উপায়ঃ
১. ভোরের সূর্যের আলো গ্রহণ করুনঃ
ভোর বেলা ৮-৯ টায় সূর্যের আলোর মধ্যে যাওয়ার অভ্যাস করুন। এ সময় সূর্যে্যর আলো দেহে ভিটামিন ডি পৌঁছায় যা আমাদের দেহের হাড়ের গঠন সুগঠিত করে। এবং আমাদের শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে। মাথা ঘোরানো এবং শরীরে শক্তি না পাওয়ার সমস্যাও সমাধান করে। তাই সকালে সূর্য্যের আলো গ্রহণের চেষ্টা করুন, এতে অনেক উপকার পাবেন।
২. চা/কফি পান করা কমিয়ে আনুনঃ
আমাদের অনেকেরি চা/কফি পান করার অভ্যাস রয়েছে। অথচ এই চা/কফির ক্যাফেইন আমাদেরকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে তোলে। চা/কফি পান করলে তাৎক্ষণিকভাবে দেহে চাঙা ভাব আসে। কিন্তু এটি আমাদের দেহ পানিশূন্য করে ফেলে, আর এই কারণে আমাদের দেহে পানির চাহিদা বৃদ্ধি পায় ও আমরা দুর্বলতা অনুভব করি। তাই চা/কফি পানের মাত্রা কমিয়ে ফেলুন। এর ফলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন।
৩. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুনঃ
আমাদের দেহের মূল অংশই হচ্ছে পানি। আর আমাদের দেহে পানির ঘাটতি হলে আমরা শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে যাই। তাই আমাদের উচিৎ নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। এরফলে দেহ হাইড্রাইট থাকবে শারীরিক দুর্বলতার সমস্যাও কেটে যাবে একেবারে।
৪. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোনঃ
ঘুম আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি ঘুমও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের পরিমাণ যদি কম হয় তাহলে আমরা শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি। কারণ ঘুমের মাধ্যমে দেহের ও মস্তিষ্কের কোষ নতুন করে শক্তি অর্জন করে। আর যখন ঘুম কম হয় তখন মাথা ঘোরানো এবং দুর্বলতা অনুভব করার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে পারেন।
৫. এনার্জি সমৃদ্ধ কিছু খাবার হাতের কাছে রাখুনঃ
শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু খাবার খান যা দেহে শক্তি ফিরিয়ে দেবে। যেমন- বাদাম, কলা, কমলা এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার। এরফলে শারীরিক দুর্বলতাকে কাটিয়ে তুলা সম্ভব।
৬. স্যুপ পান করুনঃ
টমেটোর স্যুপ পান করুন। এতে করে ক্ষুধা বেড়ে যাবে। খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা জাগবে। তাছাড়া টমেটোর স্যুপ পান করার ফলে শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে দুর্বলতাও কেটে যায়।
৭. দুধঃ
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সবচেয়ে ভাল খাদ্য হল দুধ। নানা ধরণের স্বাস্থ্যকর ভিটামিনে ভরপুর দুধ আমাদের দেহের দুর্বলতা খুব সহজেই দূর করে দেয়। এবং দুধের ক্যালসিয়াম উপদান আমাদের দেহের হাড়গুলোকে মজবুত করে। যখনই আপনার শরীর খারাপ লাগবে তখনি ১ গ্লাস দুধের সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খান। অথবা দুধের মধ্যে ২/৩ ডুমুর ফল দিয়ে তা সেদ্ধ করে সেই দুধ খেতে পারেন। আর এই ডুমুর মিশ্রিত দুধ দেহের দুর্বলতা দূর করে দিবে।
৮. খেজুরঃ
খেজুর হলো শক্তিবর্ধক। খেজুরের সাথে মাখন মিশিয়ে খেলে প্রচুর শক্তি পাবেন। এতে দুর্বলতাও খেটে যাবে। নতুন রক্তকোষ তৈরির জন্য প্রত্যহ ৮-১০ টি খেজুর খাবেন।
শরীর দুর্বল হলে কি করা উচিত?
মানব দেহ রক্ত মাংসে গড়া। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যদি শরীর দুর্বল অনুভব করেন তবে প্রথমে এই দুর্বল লাগার সঠিক কারণ খুঁজে বের করুন। যদি খুঁজে বের করতে অক্ষম হন তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরনাপন্য হন। আর যদি খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়ে যান তবে যে কারনে আপনার শরীর দুর্বল হচ্ছে, সে মোতাবেক আপনি নিজেই পদক্ষেপ নিন, এরফলে এই দুর্বলতা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন ।
শরীর দুর্বল হলে কি খাওয়া প্রয়োজন?
মানুষের খ্যাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে শারীরিক সুস্থতা এবং সবলতার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক । শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সঠিক খাবারের কোনো বিকল্প নেই । তাই লক্ষ্য রাখতে হবে প্রতিদিনের খাবার যেন স্বাস্থ্যকর হয়। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুধ, ডিম, তাজা শাক-সবজি, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার রাখলে ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করলে শারীরিক দুর্বলতা দুর হয়ে যায়। তাই দুর্বলতা কাটাতে কিছু খাবার সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো –
১। ডিমঃ শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে ডিম সবচেয়ে ভাল খাবার। ডিমে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন এ, আয়রন, ফলিক এসিড, রিবফ্লেভিন এবং পেন্টথেনিক এসিড। তাই দেহের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খান।
২। দুধঃ শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সবচেয়ে ভাল খাবার হল দুধ। দুধের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমান প্রাণিজ ফ্যাট যা শারীরিক শক্তির উন্নতি ঘটায় এবং দুধের ক্যালসিয়াম উপাদান যা আমাদের দেহের হাড়কে মজবুত করতে সহায়তা করে। তাই যখনই শরীর দুর্বল হয়ে যাবে তখনই ১ গ্লাস দুধের সাঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খান।
৩। মধুঃ মধু শরীর ও মনের দুর্বলতা দূর করতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে লৌহ, সিলিকন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন। তাই শারীরিক শক্তি বাড়াতে প্রত্যেক সপ্তাহে ৩-৪ দিন এক গ্লাস গরম পানিতে এক টেবিল চামচ খাঁটি মধু মিশিয়ে পান করুন। এর ফলে শারীরিক দুর্বলতা কেটে যাবে।
৪। কলাঃ কলা হলো ডোপামিন ও সেরোটোনিন সমৃদ্ধ ফল। কলাতে আছে ভিটামিন এ, বি, সি এবং পটাশিয়াম। ভিটামিন বি এবং পটাশিয়াম শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে । আর কলাতে আছে ব্রোমেলিয়ান । যা শরীরের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে । কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে। এরফলে দুর্বল হবে না ।
৫। ভিটামিন সিঃ শরীরের দুর্বলতা দূর করতে ভিটামিন-সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন-সির অভাব পূরণ করতে বেশি করে টকজাতীয় ফল খেতে হবে। যেমন- কমলা, লেবু, আঙুর ইত্যাদি ফল দৈহিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অনেক উপকারী।
৬। প্রোটিনঃ শরীরের দুর্বলতা কাটাতে প্রোটিন যুক্ত খাবার খুবই কার্যকরী। প্রোটিনের একটি ভালো উৎস হচ্ছে ডিম। ডিম খাওয়ার ফলে দেহের কোষগুলো সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এবং এতে লুটেইন ও জিক্সানথিন থাকে যা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ও বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডাল ও মটরজাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে।
৭। সেলেনিয়ামঃ সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবারে রয়েছে অ্যান্টিঅক্রিডেন্ট। এগুলো থাকার কারণে ক্লান্তিভাব, নিদ্রাহীনতা ও দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে। এমনকি এ ধরণের খাবারগুলো দীর্ঘমেয়াদি হৃদরোগ থেকেও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবারগুলো হলো-মটর, ডিম, বাদাম, মাশরুম, মসুর ডাল ইত্যাদি।
৮। ডার্ক চকলেটঃ ডার্ক চটলেট হচ্ছে এমন এক ধরনের চকলেট যা দুধ ও মাখন ছাড়া cocoa solids এবং cocoa butter থেকে তৈরি করা হয়। এতে রয়েছে ফেনিলেথিলামিন (PEA) ও সেরোটোনিন। এগুলো দেহে শক্তির মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
৯। রসুনঃ আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো রসুন। এই রসুনে রয়েছে থিয়ামিন (ভিটামিন বি১),নায়াসিন (ভিটামিন বি৩), রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ফোলেট (ভিটামিন বি৯) ও সেলেনিয়াম। একে প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক বলা হয়। তাই শরীরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে নিয়মিত রসুন খেতে পারেন।
১০। আদাঃ আদাতে রয়েছে অনেক ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। ভোরে পানির সাথে আদার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে অনেক উপকার পাবেন।
এই খাবারগুলো আপনার খাদ্য তালিকায় থাকলে আপনার শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে পারবেন। তবে এগুলো খাওয়ার সাথে সাথে লক্ষ রাখতে হবে যেন ওজন বৃদ্ধি না পায়। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং সঠিক পরিমাণে সুষম খাবার গ্রহণ করুন।
শেষকথাঃ
আমাদের দেহ রক্ত মাংসে গড়া। যে কোনো সময় যে কোনো কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যদি শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত বোধ হয় তবে একে অবহেলা না করে, দুর্বল লাগার কারণগুলো খুঁজে বের করুন। যদি এই দুর্বলতা কাটাতে সক্ষম হন তাহলে সে মোতাবেক আপনি নিজেই পদক্ষেপ নিন। আর যদি দুর্বলতা বুঝতে না পারেন, তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া স্যালাইন বা কোনো ভিটামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করনবেন না।