যথাযোগ্য মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২৩ উদযাপন করেছে শীর্ষস্থানীয় কিডনি বিষয়ক বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে সংস্থাটি বৃহস্পতিবার দিনব্যাপি নানাবিধ কর্মসূচী পালন করে। কর্মসূচী সমূহের মধ্যে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়, ঢাকাস্থ মোহাম্মদপুর -এর নবোদয় আবাসিক এলাকায় বর্ণাঢ্য র্যালি, স্বল্প মূল্যে কিডনি স্ক্রিনিং কর্মসূচী, পথচারীদের মধ্যে টি-শার্ট বিতরণ, পরবর্তীতে ধানমন্ডি আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যৌথ র্যালির আয়োজন ও বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন সহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে কিডনি রোগ প্রতিরোধের বার্তা প্রচারের লক্ষ্যে বিশেষ সাক্ষাৎকার ও নিবন্ধ প্রচার করেছে।
বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২৩ এর প্রতিপাদ্যের আলোকেই ক্যাম্পস তার এ বছরের সমস্ত আয়োজন সাজিয়েছে। র্যালি শেষে ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ বলেন, কিডনি রোগী দুর্যোগের সময়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। আমরা জানি কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক। সারা বিশে^ ৮৫ কোটি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে ২ কোটিরও অধিক কিডনি রোগী। প্রতি বছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার লোক কিডনি সম্পূর্ণ বিকলের শিকার বাংলাদেশে। আরও ১৫ থেকে ২০ হাজার আকস্মিক কিডনি বিকল হয়। এদের বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন প্রয়োজন হয়। কিডনি বিকলের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় শতকরা ১০ জন এর ব্যয় সংকুলান করতে পারে। চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেক পরিবার আর্থিকভাবে নিংস্ব হয়ে যায়। সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন বীমার আওতায় আনতে হবে।
দুর্যোগের সময় কিডনি বিকল রোগীদের বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আমরা জানি কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেলে বেচেঁ থাকার জন্য প্রয়োজন ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন। ডায়ালাইসিস সাধারণত সপ্তাহে ২-৩ দিন করতে হয়। দুর্যোগের কারণে ডায়ালাইসিস বন্ধ হলে মৃত্যু এগিয়ে আসবে। কিডনি সংযোজনের রোগীদের নিয়মিত ঔষধ খেতে হবে, ঔষধ নিয়মিত না খেলে সংযোজিত কিডনি বাতিল হয়ে যেতে পারে। আবার দুর্যোগের সময়ে আঘাত, রক্তক্ষরণ, দুর্যোগ পরবর্তি ডায়রিয়া, ইনফেকশন এসব কারনে তীব্র মাত্রার আকস্মিক কিডনি বিকল হতে পারে। যার জন্য ডায়ালাইসিস প্রয়োজন। অল্প মাত্রার দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে সম্পূর্ণ কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। তখন ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হবে। তাই কিডনি বিকল রোগী দুর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে ।
তিনি আরো বলেন, দুর্যোগের মোকাবেলায় কিডনি রোগীদের নিজ পূর্ব প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরী। যেমন ঃ প্রয়োজনীয় ঔষধসহ জরুরী “কীটবক্স” প্রস্তুত রাখা, বিকল্প ডায়ালাইসিস সেন্টার স¤পর্কে আগে থেকে ধারণা নিয়ে রাখা, সাহায্যকারী নেটওয়ার্ক তৈরী করে রাখা, যেমন-বন্ধু, আত্মীয়, প্রতিবেশীদের সহায়তা। ডায়ালাইসিস পেতে বিলম্ব হলে সাময়িক খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, যেমনÑপানি কম, মাছ-মাংস কম, পটাশিয়াম যুক্ত খাবার যেমন-ফল ও সবজি পরিহার।
কিডনি রোগের সুলভে চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে ক্যাম্পস ইতিমধ্যে ঢাকার পাশাপাশি মাদারীপুর, চাঁদপুর, টাঙ্গাইল, সখিপুর ও নবাবগঞ্জ শহরে কিডনি সেবা কেন্দ্র ও ডায়ালাইসিস কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এ সব কেন্দ্র সমূহের পক্ষ থেকেও নিজ নিজ জেলা ও থানা শহরে বিশ^ কিডনি দিবস উদযাপন উপলক্ষে র্যালি ও বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
ক্যাম্পস এর নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ান সালেহীন বলেন, কিডনি রোগ ভয়াবহ বটে, তবে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এ রোগের প্রকোপ কমিয়ে রাখার লক্ষ্য নিয়েই ক্যাম্পস তার কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।