হজমক্ষমতা ভালো থাকলে বিভিন্ন অসুখের ভয় অনেকটাই কমে যায়। কারণ ভালো হজমের ফলে সঠিক পুষ্টি শরীরে পৌঁছাতে পারে। এদিকে বদ হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আপনাকে নানাভাবে অসুস্থ করে দিতে পারে। পেটের এ ধরনের সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের একের পর এক অসুখ লেগেই থাকে। কোনো খাবার খেয়েই যেন স্বস্তি মেলে না। এমন সমস্যা থেকে বাঁচতে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
বদহজম বা ইনডাইজেশন একটি শারীরিক অবস্থা। এটা ডিসপেপসিয়া নামেও পরিচিত। বদহজম বা এসিডিটি হয় না এরকম মানুষ খুব কম মিলবে। এই অবস্থায় প্রায়শই পেটে ব্যথার সাথে একটা অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করে। পরিপাকজনিত সমস্যা বা বদহজমের জন্যই মূলত এই অবস্থা দেখা যায়।
পাকস্থলীতে থাকা এসিড আপনার পাকস্থলীর আস্তরণ কিংবা গলায় জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। একারণে বদহজম হয় এবং আপনি জ্বালাপোড়া ও ব্যথা অনুভব করেন। গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের লক্ষণ হিসেবেও বদহজম দেখা দিতে পারে।
বদহজমের আরও কিছু কারণ:
বদহজম হওয়ার পেছনে খাদ্যাভ্যাস একটি বড় কারণ হতে পারে। অনেকেই-
খাদ্য গ্রহণের অল্প সময়ের মধ্যেই শুয়ে পরা ইত্যাদি যা কিনা বদহজম ঘটাতে পারে।
অতিরিক্ত ঔষধ যেমন- অ্যাসপ্রিন বা আইব্রুফেন জাতীয় ঔষধ সেবন শরীরের জন্য মোটেও ভাল নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে ওষুধ খেলে শরীরে এসিডের মাত্রায় তারতম্য ঘটে ফলে বদহজমের সৃষ্টি হতে পারে।
সিগারেটের ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ আমাদের শরীরের ভিতরের হজম সহায়ক এনজাইমগুলোকে নিঃসরণে বাধা দেয় ফলে হজম প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়। এর ফলে অনেকক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে শরীর কোন খাবার হজম করতে পারে না।
অতিরিক্ত মদ্যপান বদহজমের সমস্যার জন্য দায়ী। বেশি মদ পান করলে তা শরীর থেকে পানি সরিয়ে কোষকে সংকুচিত করে তুলে। ফলে শরীরে পানি স্বল্পতা সৃষ্টি হয়ে বদহজম হতে পারে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ, মন খারাপ বা অবসাদ এবং দুশ্চিন্তা করলে তা শরীরের হরমোনের পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে। আর এর ফলে শরীরে খারাপ এনজাইমের নিঃসরণ হয় যা খাদ্য হজমে ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে।
এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যার নাম Helicobacter pylori। এর কারণেও বদহজম হতে পারে।
বদহজমের কারনে এক বা একাধিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
বদহজমের সমস্যা গুরুতর হলে অন্যান্য অনেক উপসর্গ দেখা যায়। সেইরকম কিছু হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
বদহজম | এসিড রিফ্লাক্স |
---|---|
বদহজম হল উপরের পেটে ব্যাথা বা অস্বস্তি। | এসিড রিফ্লাক্স হল বুক জ্বালা-পোড়ার সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়। |
বদহজমের মূল কারণগুলো হল অতিরিক্ত খাবার খাওয়া, দ্রুত খাবার খাওয়া, ধূমপান ইত্যাদি। | এসিড রিফ্লাক্সের মূল কারণগুলো হল বেশি খাবার খাওয়া, ভারী খাবার খাওয়ার পর পরই শুয়ে পরা, ঘুমানোর আগে স্ন্যাক্স খাওয়া ইত্যাদি। |
এটা সম্পূর্ণটাই নির্ভর করে বদহজমের নির্দিষ্ট কারণ এবং তার প্রকারের ওপর। কারোর ক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে এই সমস্যা দূর হয়ে যায় কারো ক্ষেত্রে আবার দীর্ঘদিন যাবৎ এই সমস্যা স্থায়ী হতে পারে। | এটি সাধারণত কিছু সময়ের জন্য (দুই ঘন্টা) পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। |
এর প্রতিকার হল মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করা এবং ধূমপান বর্জন করা, রাতের খাবার দেরিতে না খাওয়া। | এসিড রিফ্লাক্সের প্রতিকার হল এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ যা পাকস্থলির এসিডকে প্রশমিত করে। |
বদহজম দূর করতে আমরা সাধারনত ঔষধের উপর নির্ভর করে থাকি। কিন্তু আমরা চাইলে ঘরোয়া কিছু উপায় মেনে বদহজম দূর করতে পারি।
মানসিক চাপের কারণেও অনেক সময় হজমের সমস্যা দেখা যায়। এইসব ক্ষেত্রে বদহজম দূরীকরণের জন্য সবার প্রথম মানসিক চাপ কমানো দরকার। আর মানসিক চাপ কম করার জন্য এবং প্রয়োজনীয় থেরাপির পরামর্শ গ্রহণের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার।
যাদের বদহজমের সমস্যা তারা যদি কিছু ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করেন তবে এই সমস্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব।
তবে কিছুক্ষেত্রে বদহজম বা এসিডিটির মাত্রা মারাত্মক আকার কিছু ঔষধ এসিডের পরিমাণ কমায় সেগুলো হল-
তবে যাদের বদহজমের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে, তারা চিকিতসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ গ্রহণ করতে পারেন। [2]
গ্যাস্ট্রো-এসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (gastro-oesophageal reflux disease) হলেও বদহজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বদহজমের অপ্রীতিকর লক্ষণগুলি আরাম ও প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি পুরানো প্রতিকার ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও তাদের বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়, অনেক প্রত্যাশিত মায়েরা তাদের সহায়ক বলে মনে করেন ।
গর্ভাবস্থায় যদি উপসর্গগুলি আরও খারাপ হয়ে যায় তবে চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় বুকজ্বালা সন্তানের ক্ষতি করবে না বা প্রসবের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। তবে দীর্ঘস্থায়ী সময়কালের জন্য বুকজ্বালা থাকলে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে। এটি প্রি-এক্লাম্পসিয়ার চিহ্ন হতে পারে। এই অবস্থা প্রস্রাবের মধ্যে প্রোটিন এবং উচ্চ রক্তচাপ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। মায়ের পাশাপাশি শিশুর জন্য এটি খুব বিপজ্জনক হতে পারে।