মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করছেন ! জেনে নিন ক্ষতি কতটা ! সব হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ঘোষণা চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, জরুরি বিভাগসহ সব সেবা বন্ধ ঢামেকে চিকিৎসা সেবায় অবহেলা করলেই আইনানুগ ব্যবস্থা -স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ স্বাস্থ্যের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন ছড়িয়ে পড়ছে এমপক্স ভাইরাস, বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ডব্লিওএইচওর ঢাকা মেডিকেলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ! পঞ্চগড়ে আন্তর্জাতিক মানের সুপার-স্পেশালিটি হেলথ-কেয়ার “নর্থ পয়েন্ট মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল-এনপিএমসিএইচ” বাজারে ৬৫ হাজার টাকার ‘ভুয়া’ ক্যান্সার ইনজেকশন দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে

বদহজমের লক্ষণ ও সমাধান : জানতে হবে, মানতে হবে

হজমক্ষমতা ভালো থাকলে বিভিন্ন অসুখের ভয় অনেকটাই কমে যায়। কারণ ভালো হজমের ফলে সঠিক পুষ্টি শরীরে পৌঁছাতে পারে। এদিকে বদ হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আপনাকে নানাভাবে অসুস্থ করে দিতে পারে। পেটের এ ধরনের সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের একের পর এক অসুখ লেগেই থাকে। কোনো খাবার খেয়েই যেন স্বস্তি মেলে না। এমন সমস্যা থেকে বাঁচতে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

বদহজম বা ইনডাইজেশন একটি শারীরিক অবস্থা। এটা ডিসপেপসিয়া নামেও পরিচিত। বদহজম বা এসিডিটি হয় না এরকম মানুষ খুব কম মিলবে। এই অবস্থায় প্রায়শই পেটে ব্যথার সাথে একটা অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করে। পরিপাকজনিত সমস্যা বা বদহজমের জন্যই মূলত এই অবস্থা দেখা যায়।

বদহজম কেন হয়?

বদহজম কেন হয়

পাকস্থলীতে থাকা এসিড আপনার পাকস্থলীর আস্তরণ কিংবা গলায় জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। একারণে বদহজম হয় এবং আপনি জ্বালাপোড়া ও ব্যথা অনুভব করেন। গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের লক্ষণ হিসেবেও বদহজম দেখা দিতে পারে।

বদহজমের আরও কিছু কারণ:

খাদ্যাভ্যাসে ভুল

বদহজম হওয়ার পেছনে খাদ্যাভ্যাস একটি বড় কারণ হতে পারে। অনেকেই-

  • খাবার ভালোভাবে না চিবিয়ে খেয়ে থাকেন এবং খাবারের মাঝে বারবার পানি খেয়ে থাকেন
  • অতিরিক্ত পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ
  • তেল মশালাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ

খাদ্য গ্রহণের অল্প সময়ের মধ্যেই শুয়ে পরা ইত্যাদি যা কিনা বদহজম ঘটাতে পারে।

অতিরিক্ত ঔষধ গ্রহণ  

অতিরিক্ত ঔষধ যেমন- অ্যাসপ্রিন বা আইব্রুফেন জাতীয় ঔষধ সেবন শরীরের জন্য মোটেও ভাল নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে ওষুধ খেলে শরীরে এসিডের মাত্রায় তারতম্য ঘটে ফলে বদহজমের সৃষ্টি হতে পারে।

মদ্যপান বা ধূমপান

সিগারেটের ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ আমাদের শরীরের ভিতরের হজম সহায়ক এনজাইমগুলোকে নিঃসরণে বাধা দেয় ফলে হজম প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়। এর ফলে অনেকক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে শরীর কোন খাবার হজম করতে পারে না।  

অতিরিক্ত মদ্যপান বদহজমের সমস্যার জন্য দায়ী। বেশি মদ পান করলে তা শরীর থেকে পানি সরিয়ে কোষকে সংকুচিত করে তুলে। ফলে শরীরে পানি স্বল্পতা সৃষ্টি হয়ে বদহজম হতে পারে।

মানসিক চাপ

অতিরিক্ত মানসিক চাপ, মন খারাপ বা অবসাদ এবং দুশ্চিন্তা করলে তা শরীরের হরমোনের পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে। আর এর ফলে শরীরে খারাপ এনজাইমের নিঃসরণ হয় যা খাদ্য হজমে ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে।

ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ

এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যার নাম Helicobacter pylori। এর কারণেও বদহজম হতে পারে

বদহজমের লক্ষণ

বদহজমের লক্ষণ

বদহজমের কারনে এক বা একাধিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

  • পেট ব্যথা
  • উপরের পেটে অস্বস্তি
  • পেট ফাঁপা
  • বমি বমি ভাব
  • অল্প খাওয়ার পরই পেট ভার ভাব

বদহজমের সমস্যা গুরুতর হলে অন্যান্য অনেক উপসর্গ দেখা যায়। সেইরকম কিছু হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

  • বমির সাথে রক্তপাত
  • ওজন হ্রাস
  • খাবার গিলতে অসুবিধা
  • কালো বর্ণের মলত্যাগ

বদহজম ও এসিড রিফ্লাক্সের মধ্যে পার্থক্য

বদহজমএসিড রিফ্লাক্স
বদহজম হল উপরের পেটে ব্যাথা বা অস্বস্তি।এসিড রিফ্লাক্স হল বুক জ্বালা-পোড়ার সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়।
বদহজমের মূল কারণগুলো হল অতিরিক্ত খাবার খাওয়া, দ্রুত খাবার খাওয়া, ধূমপান ইত্যাদি।এসিড রিফ্লাক্সের মূল কারণগুলো হল বেশি খাবার খাওয়া, ভারী খাবার খাওয়ার পর পরই শুয়ে পরা, ঘুমানোর আগে স্ন্যাক্স খাওয়া ইত্যাদি।
এটা সম্পূর্ণটাই নির্ভর করে বদহজমের নির্দিষ্ট কারণ এবং তার প্রকারের ওপর। কারোর ক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে এই সমস্যা দূর হয়ে যায় কারো ক্ষেত্রে আবার দীর্ঘদিন যাবৎ এই সমস্যা স্থায়ী হতে পারে।এটি সাধারণত কিছু সময়ের জন্য (দুই ঘন্টা) পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
এর প্রতিকার হল মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করা এবং ধূমপান বর্জন করা, রাতের খাবার দেরিতে না খাওয়া।এসিড রিফ্লাক্সের প্রতিকার হল এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ যা পাকস্থলির এসিডকে প্রশমিত করে।

বদহজমের ঘরোয়া চিকিৎসা

বদহজম দূর করতে আমরা সাধারনত ঔষধের উপর নির্ভর করে থাকি। কিন্তু আমরা চাইলে ঘরোয়া কিছু উপায় মেনে বদহজম দূর করতে পারি।

১। থেরাপি

মানসিক চাপের কারণেও অনেক সময় হজমের সমস্যা দেখা যায়। এইসব ক্ষেত্রে বদহজম দূরীকরণের জন্য সবার প্রথম মানসিক চাপ কমানো দরকার। আর মানসিক চাপ কম করার জন্য এবং প্রয়োজনীয় থেরাপির পরামর্শ গ্রহণের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার।

২। খাদ্যাভ্যাস

  • খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার রোগীর উপসর্গ বাড়িয়ে দেয়। তাই এগুলো পরিহার করতে করা উচিত।
  • চা, কফি, কোমল পানীয় বাদ দিতে হবে।
  • অতিরিক্ত মসলা ও চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে।
  • রাতের খাবার খাওয়ার ৩ ঘন্টা পর ঘুমাতে হবে।

৩। শারীরিক ব্যায়াম

যাদের বদহজমের সমস্যা তারা যদি কিছু ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করেন তবে এই সমস্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব।

কখন ঔষধ প্রয়োজন?

তবে কিছুক্ষেত্রে বদহজম বা এসিডিটির মাত্রা মারাত্মক আকার কিছু ঔষধ এসিডের পরিমাণ কমায় সেগুলো হল-

  • এন্টাসিড (Antacid)
  • প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর

তবে যাদের বদহজমের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে, তারা চিকিতসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ গ্রহণ করতে পারেন। [2]

কোন কোন রোগে বদহজমের সমস্যা হয়?

  • হায়াটাস হার্নিয়া (Hiatus hernia)
  • গ্যাস্ট্রিক
  • পেপটিক আলসার
  • পাকস্থলীর ক্যান্সার 
  • গলগণ্ড ও অগ্নাশয়ের সমস্যা
  • গলব্লাডারে পাথর
  • কিডনীতে পাথর
  • খাদ্য নালীর অপারেশন 
  • Helicobacter pylori নামক জীবাণু দ্বারা সংক্রমণ 

গ্যাস্ট্রো-এসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (gastro-oesophageal reflux disease) হলেও বদহজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

গর্ভবতী মহিলাদের বদহজমের সমাধান

বদহজমের অপ্রীতিকর লক্ষণগুলি আরাম ও প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি পুরানো প্রতিকার ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও তাদের বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়, অনেক প্রত্যাশিত মায়েরা তাদের সহায়ক বলে মনে করেন ।

  • খাওয়ার পরে গর্ভবতী মহিলাদের পেটে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • খাবারকে ৫-৬ বেলায় ভাগ করে বারে বারে খেতে হবে।
  • খাবারটি গিলে ফেলার আগে ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেতে হবে।
  • কফি এবং কোমল পানীয় সীমিত করতে হবে। গর্ভাবস্থায় এগুলি থেকে দূরে থাকা উচিত।
  • চর্বিযুক্ত খাবার, চকোলেট এবং অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এগুলো বদহজমকে আরও খারাপ করে তোলে।
  • খাওয়ার সময় সোজা হয়ে বসে থাকতে হবে। এটি পেট থেকে চাপ সরাতে সাহায্য করে এবং হজমকে সহজ করে তোলে।
  • ঘুমোতে যাওয়ার কমপক্ষে দুই থেকে তিন ঘন্টা আগে রাতের খাবার শেষ করতে হবে।
  • বিছানায় শোবার সময় আপনার মাথা ও ঘাড় উঁচু অবস্থানে রাখতে হবে- এটি ঘুমের সময় পাকস্থলীর এসিড গলা পর্যন্ত উঠে আসা বন্ধ করতে পারে। 
  • খাবারের সময় পানি পান করবেন না কারণ এটি বদহজমের লক্ষণগুলিকে বাড়িয়ে তোলে। খাওয়ার আগে বা পরে পান করতে হবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
  • কোমরের চারপাশে আলগা এবং আরামদায়ক পোশাক পরিধান করতে হবে।
  • মানসিক চাপ কমাতে হবে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

গর্ভাবস্থায় যদি উপসর্গগুলি আরও খারাপ হয়ে যায় তবে চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে।

  • খাবার গিলতে অসুবিধা
  • তীব্র গ্যাস হলে
  • বমি বা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার সমস্যায় 
  • জ্বলন্ত সংবেদনের কারণে ঘুমাতে অক্ষম
  • কালো মল হলে
  • অতিরিক্ত ওজন কমে গেলে
  • পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে

গর্ভাবস্থায় বুকজ্বালা সন্তানের ক্ষতি করবে না বা প্রসবের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। তবে দীর্ঘস্থায়ী সময়কালের জন্য বুকজ্বালা থাকলে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে। এটি প্রি-এক্লাম্পসিয়ার চিহ্ন হতে পারে। এই অবস্থা প্রস্রাবের মধ্যে প্রোটিন এবং উচ্চ রক্তচাপ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। মায়ের পাশাপাশি শিশুর জন্য এটি খুব বিপজ্জনক হতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ ফলো করুন

Categories