ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নতুন ডেঙ্গু সেল চালু করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ এ ডেঙ্গু ওয়ার্ডের উদ্বোধন করেন। হাসপাতালটিতে আগে ডেঙ্গুর চিকিৎসার জন্য ৬০ জনের সুযোগ ছিল, এখন তা বেড়ে দাঁড়ালো ৮৮ জনে।
সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ যেভাবে বাড়ছে এমন চলতে থাকলে সামনে কোথায় আমরা রোগীদের জায়গা দেব তার জন্য আমাদেন নতুন নতুন জায়গা করতে হয়েছে। প্রথমে আমাদের সাধারণ জরুরি বিভাগে ডেঙ্গু কর্নার ছিল, রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা ই-ব্লকে নতুন কর্নার সম্প্রসারণ করি। রোগী আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ এই এফ ব্লকে আমরা নতুন আরও ২৮টি শয্যা সংযোজন করেছি। এরপরও যদি শয্যা লাগে তবে আমাদের যতটুকু জায়গা আছে সেখানে শয্যা বাড়ানো হবে। কিন্তু আমরাই সব মানুষকে সেবা দিতে পারব না। আরও যে সব সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল আছে তাদেরও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কোনো ডেঙ্গু রোগী যেন ক্যাজুয়ালিটিভাবে মৃত্যু না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এজন্য সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কিছু কাজ করতে হবে। এডিস মশাার লার্ভা ধ্বংস করতে হবে। কোথায় কোথায় এডিস মশার লার্ভা আছে তা খুঁজে বের করতে হবে। এখন এডিস মশা সব জায়গায় হয়। মশা দিনেও কামড়ায় রাতেও কামড়ায়। আবদ্ধ জলাধার থাকলে সেটি পরিষ্কার করতে হবে। ছাদ কৃষি হোক আর ছাদে বৃষ্টির পানি জমে থাকলে তাও দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে। বাড়ির আশপাশে পানির পাত্র থাকলে তা উল্টে দিতে হবে। এসব করলে কিছু লার্ভা কমে যাবে। প্রয়োজনে এডিস মশার লার্ভা নিধনে কীটনাশক দিতে হবে।
ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, জ্বর হলেই প্রথম দিনেই এনএসওয়ান পরীক্ষা করতে হবে। চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ খাওয়া যাবে না। সব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হবে না। তবে চিকিৎসকের সংস্পর্শে থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দীন শাহ্, ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছা, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. রেজাউর রহমান, অতিরিক্ত পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. পবিত্র কুমার দেবনাথ, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দেবাশীষ বৈরাগী প্রমুখ।
এদিকে সারা দেশে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় আগের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ ২৬৫৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া ডেঙ্গুতে মারা গেছেন আরও ১৪ জন। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে ২১৫ জনের মৃত্যু হলো।
বুধবার (২৬ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে ১০ জন ঢাকার। আর ঢাকার বাইরে রয়েছেন ৪ জন। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে রেকর্ড ২ হাজার ৬৫৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩২৭ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩২৬ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৮১৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৪৭৬০ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৪২৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৪০৩৪১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকায় ২৩৬৭৬ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৬৬৬৫ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩১৯৩৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১৮৭৪৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৩১৯৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। তবে এবার মৃত্যুর যে হার তা আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।