অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষু ক্যাম্পে টাঙ্গাইল ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দরিদ্র গ্রামবাসীগণের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জন রোগীর নিবন্ধন ও প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ের জন্য বিনামূল্যে রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে মেডিকেল ক্যাম্পের ১০ দিন আগে থেকে অর্থাৎ ১১ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির দিন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আগত বিশেষজ্ঞ সহ প্রায় অর্ধশতাধিক চিকিৎসক, দিনব্যাপী রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র প্রদান সহ বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদান করে। এছাড়াও ২৫০ এর অধিক চক্ষু রোগীদের চোখের ছানী অপারেশন ও লেন্স প্রতিস্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়।
দেশের শীর্ষস্থানীয় কিডনি বিশেষজ্ঞ, ক্যাম্পস এর সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে “ সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি-সুস্থ জীবনধারা” শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও প্রয়াস-২০ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
আলোচনা সভায় কিডনি বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে, ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি কিডনি বিকল রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে অকাল মৃত্যুবরণ করবে। বর্তমানে ৮৫ কোটির অধিক লোক দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য এরমধ্যে ৭৫ কোটি রোগী জানেনা যে মরণঘাতী কিডনি রোগ নীরবে তাদের কিডনি নষ্ট করে চলেছে।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীর হার শতকরা ১৬-১৮ ভাগ। কিডনি রোগের শেষ পরিণতি কিডনি বিকল। একবার কিডনি বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি সংযোজন অথবা ডায়ালাইসিস। কিন্তু এই চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল যে, শতকরা ১০ জন কিডনি বিকল রোগী তা বহন করতে পারে না। পক্ষান্তরে আমরা যদি একটু স্বাস্থ্য সচেতন হই, সুস্থ জীবন ধারা যেমন- কায়িক পরিশ্রম ও নিয়মিত ব্যয়াম করি, সুসম পরিমিত খাবার খাই, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখি, ধুমপান, ফাস্টফুড পরিহার করি, পর্যাপ্ত পানি পান করি তাহলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা যায়।
সভায় প্রধান অতিথি, জনাব গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, এরুপ মানবিক আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। সমাজের প্রত্যেকের ক্যাম্পস এর মতো মানবিক কর্মকান্ডে নিজেদের সাধ্যমতো অবদান রাখা উচিত। তিনি আরো বলেন, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ব্যায়াম, খেলাধুলার বিকল্প নেই। শিশুদের মোবাইল ফোন, ভিডিও গেইম থেকে চোখ সরাতে মাঠে নামতে হবে, তবেই হুদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, উচ্চরক্তচাপের মতো মরণব্যাধির হাত থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করা যাবে।
ক্যাম্পস এর সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ হারিসুল হক, বলেন ক্যাম্পস বিগত বছরগুলোতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক লাখেরও অধিক রোগীর বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা, সারে-তিন হাজার রোগীর চোখের ছানী অপারেশন, তিনশত রোগীর ঠোট কাটা, তালু কাটা রোগীর অপারেশন করেছে এবং বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত সাতটি সেন্টারের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস্ সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
ক্যাম্পস এর নির্বাহী পরিচালক জনাব রেজওয়ান সালেহীন এই মানবিক কর্মকান্ডে সহযোগিতার নিমিত্তে আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকল নিবেদিত প্রাণ, চিকিৎসকদের এবং টাঙ্গাইল জেলা রোভারের সকল সদস্যদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ক্যাম্পস গত বিশ বছরযাবৎ নিরলসভাবে দেশের সকলস্তরের গণমানুষকে কিডনি রোগের ভয়াবহতা ও এর উপায় সম্পর্কে সচেতন করতে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান এই বিশাল কর্মকান্ডে সহযোগিতা করার জন্য।
এছাড়াও আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল হালিম, অধ্যক্ষ, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অধ্যাপক ডাঃ হারিসুল হক, অধ্যাপক, হৃদরোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক ডাঃ ফারুক আহম্মেদ, বিভাগীয় প্রধান, মেডিসিন, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ, পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। অধ্যাপক ডাঃ এম আলমগীর চৌধুরী, বিভাগীয় প্রধান, নাক-কান-গলা বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নাসরিন বেগম, প্রতিষ্ঠাতা ও সহ-সভাপতি, ক্যাম্পস, মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন, উপসচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। মুহাম্মদ আমিন শরীফ (সুপন), সিনিয়র সহকারী সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়। মোঃ আমিমুল এহসান কবির, পরিচালক, একাউন্টেন্ট জেনারেল অফিস, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ডাঃ রুহুল আমিন মুকুল, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সখিপুর, টাঙ্গাইল। ক্যাম্পস আয়োজিত এই মানবিক কর্মকান্ডের জন্য অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদকে সকলেই ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে সামাজিক সকল কাজে তাঁদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস প্রদান করেন।