শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৮ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থী পরিষদের আন্দোলন, অবরুদ্ধ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করছেন ! জেনে নিন ক্ষতি কতটা ! সব হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ঘোষণা চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, জরুরি বিভাগসহ সব সেবা বন্ধ ঢামেকে চিকিৎসা সেবায় অবহেলা করলেই আইনানুগ ব্যবস্থা -স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ স্বাস্থ্যের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন ছড়িয়ে পড়ছে এমপক্স ভাইরাস, বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ডব্লিওএইচওর ঢাকা মেডিকেলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ! পঞ্চগড়ে আন্তর্জাতিক মানের সুপার-স্পেশালিটি হেলথ-কেয়ার “নর্থ পয়েন্ট মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল-এনপিএমসিএইচ” বাজারে ৬৫ হাজার টাকার ‘ভুয়া’ ক্যান্সার ইনজেকশন

উত্তম চিকিৎসায় সমঅধিকার; অর্জনে করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক করে ক্যাম্পস

“বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগ একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা, কিডনি রোগের প্রকোপ ব্যাপক, এ রোগের মারাত্মক পরিণতি, অতিরিক্ত চিকিৎসা খরচ এবং চিকিৎসা ব্যয় সাধ্যাতীত হওয়ায় সিংহভাগ রোগী প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর করুন চিত্র তুলে ধরেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ক্যাম্পস আয়োজিত “সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য-চিকিৎসায় সমঅধিকার; অর্জনে করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকবৃন্দ। বক্তাগণ সরকারী/বেসরকারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিংবা প্রতিষ্ঠান গুলোর সমন্বিত ও পরিকল্পিত প্রয়াসের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।

‘‘বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২৪’’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দেশের শীর্ষস্থানীয় কিডনি বিষয়ক বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস), ০৯ মার্চ (শনিবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ। তিনি তার মূল প্রবন্ধে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে, ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি কিডনি বিকল রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করবে। বর্তমানে ৮৫ কোটির অধিক লোক দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য এরমধ্যে ৭৫ কোটি রোগী জানে না যে মরণঘাতী কিডনি রোগ নীরবে তাদের কিডনি নষ্ট করে চলেছে। প্রতি বছর ১ কোটি ৩০ লাখ লোক আকস্মিক কিডনি বিকল রোগে আক্রান্ত হয় যার ৮৫ ভাগই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে। উন্নত দেশে কিডনি বিকলের চিকিৎসা করতে গিয়ে সরকার হিমশিম খাচ্ছে।

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীর হার শতকরা ১৬-১৮ ভাগ। কিডনি রোগের শেষ পরিণতি কিডনি বিকল। একবার কিডনি বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি সংযোজন অথবা ডায়ালাইসিস। কিন্তু এই চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল যে, শতকরা ১০ জন কিডনি বিকল রোগী তা বহন করতে পারে না। তাই আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে প্রায় ৯০ ভাগ রোগী বিনা চিকিৎসায় অথবা আংশিক চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করে। পক্ষান্তরে, সবাই যদি কিডনি রোগের ব্যাপকতা, ভয়াবহতা, পরিণতি ও কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং স্বাস্থ্য সম্মত জীবনযাপন করে তা হলে ৫০-৬০ ভাগ ক্ষেত্রে এই মরণঘাতী কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সুস্থ জীবন ধারার প্রধান সোপান গুলো হলো যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করা, পরিমিত স্বাস্থ্যসম্মত বা সুষম খাবার গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান পরিহার করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করা, তীব্র মাত্রার ব্যাথার ঔষধ পরিহার করা। তাছাড়া যারা ঝুঁকিতে আছেন যেমন যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বেশী, বংশে কিডনি রোগ আছে, যারা ধূমপায়ী, যারা তীব্র মাত্রার ব্যাথার ঔষধ খেয়েছেন, যাদের পূর্বে কোন কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তাদের বছরে অন্তত ২ বার প্র¯্রাব ও রক্তে ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ। কেননা প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ সনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

তিনি আরো বলেন, কিডনি বিকলের চিকিৎসা সর্বাধিক ব্যয়বহুল। ফলে চিকিৎসা করতে গিয়ে পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। উন্নত দেশগুলোতে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমে হয়। রোগীর পকেট থেকে দিতে হয় না। পাশর্^বর্তী দেশগুলোতে আংশিক খরচ সরকার বহন করে থাকে। আশাকরি, শীঘ্রই আমাদের দেশে ‘‘কিডনি সুরক্ষা বীমা” চালু হবে। যার ফলে হয়তো কিডনি রোগীদের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হবে এবং সবাইকে চিকিৎসার আওতায় আনা যাবে।

আমরা ক্যাম্পসের ¯েøাগান ‘‘কিডনি রোগ জীবননাশা-প্রতিরোধই বাঁচার আশা’’ ঘরে ঘরে পৌছে দিতে চাই। অর্থাৎ কিডনি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করে চিকিৎসার মাধ্যমে মরণব্যাধি কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা।

বিজ্ঞ আলোচক অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, প্রখ্যাত চিকিৎসক, মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, কিডনি সহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত দরিদ্র, সুযোগ বনচিত রোগীদের জন্য চিকিৎসা প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে স্বাস্হ্য বীমা চালু করা যেতে পারে, বাইরের অনেক দেশে তা আছে, যদিও আমাদের দেশে কিছু সীমাবদ্ধতা ও রয়েছে।

তিনি বলেন ক্যাম্পস এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদের যে প্রস্তাব বা দাবী যে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নামে অর্থাৎ “শেখ হাসিনা কিডনি সুরক্ষা বীমা” নামে একটি বীমা প্রকল্প চালু করা, সেটি একটি ভাল আইডিয়া, আমি মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সাথে এটি নিয়ে কথা বলব, তিনি মানব দরিদ্র এবং সবসময় মানুষের কল্যান চিন্তা করেন তাই দরিদ্র রোগীদের কল্যানে এরকম একটি বিষয়ে তিনি সদয় বিবেচনায় নিতেও পারেন ।

তিনি বলেন সরকার অব্যাহত ভাবে নানাবিধ কর্মসূচী গ্রহন করে যাচ্ছে যার মূলে মানুষের মঙ্গল, যেমন বিনামূল্যে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইনস্যুলিন সরবরাহ, উচ্চ রক্ত চাপের ২/১ টি ঔষধ বিনামূল্যে প্রদান এসব অন্তরভূক্ত রয়েছে।

তিনি আরো বলেন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ থেকে কিডনির সমস্যা হওয়ার আশংকা প্রবল এবং এসবই নিরব ঘাতক অথচ একটু সচেতন হয়ে এ রোগগুলোর সবই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

প্রতিরোধ করেই রোগ কমিয়ে আনার উপর গুরুত্ব আরোপ করে জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ বলেন মানুষ হয়ত কথা শুনতে বা মানতে চায় না তবে কিভাবে বললে শুনবে সেই প্রক্রিয়ায় যেতে হবে তবেই সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে আর রোগের হার কমে আসবে ।

তিনি বলেন তামাকের ব্যাবসা বা চাষ যারা করে তারা সমাজের শত্রæ, তবে তারা অনেক চতূরতার সাথে মানুষকে এ ক্ষতিকর জিনিসটির প্রতি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়।

অধ্যাপক আজাদ বলেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বীমার পাশাপাশি কমপ্রিহেনসিভ হেলথ কেয়ারের উপর গুরুত্ব দিতে হবে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ নিশ্চিত করতে।

অধ্যাপক ডাঃ রোবেদ আমিন বলেন দেশে কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, ডায়ালাইসিস সেন্টার সহ কিডনি চিকিৎসার সুযোগ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই যৎসামান্য তাই দেশের কিডনি চিকিৎসার চিত্র খুবই হতাশা ব্যঞ্জক। যদি দেশে একসাথে ৪০ থেকে ৫০ হাজার রোগীর কিডনি বিকল হয়ে যায় তখন যে দূর্যোগ তৈরি হবে তা সামাল দেয়ার সামর্থ কোথায়? এটিকে মাথায় রেখে প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে।

তিনি বলেন দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা প্রাপ্তিতে সমঅধিকারের কথা ইউনিভারসাল হেলথ কাভারেজ এর প্রিনসিপালে উল্লেখ আছে। স্বস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচীতে কার্ডের মাধ্যমে সেবা দেয়ার অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি হবে।

তিনি জোড় দিয়ে বলেন যে কিডনি চিকিৎসা সম্প্রসারণর ডায়ালাইসিস সেন্টার বৃদ্ধি খুবই জরুরি তাই হাসপাতাল বা ক্লিনিক এর সাথে নয় বরং পৃথক হেমো-ডায়ালাইসিস সেন্টার এর লাইসেন্স প্রদানের ব্যপারে নীতি প্রনয়ন করতে হবে কারন পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে কমিউনিটি ডায়ালাইসিস সুবিধা বিদ্যমান।

কিডনি রোগকে ‘নিরব দুর্যোগ’ বলে উল্লেখ করে কিডনি ফাউন্ডেশন এর সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ হারুন উর রশিদ বলেন, এ রোগের জটিলতা ও চিকিৎসা ব্যয়ের আধিক্য বিবেচনায় প্রতিরোধকেই একমাত্র অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।

গাজী আশরাফ হোসেন বলেন, বিশেষ করে বাচ্চাদের এবং যুব সমাজের মাঝে যাতে কিডনি রোগ প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য নিয়মিত খেলাধুলা, নিয়মিত হাঁটা ও ব্যয়াম করার ব্যবস্থা নিতে হবে। কঠিন ভাবে তাদের ফাষ্টফুড, জাঙ্কফুড, অলসতার প্রবণতা থেকে মুক্ত করতে হবে।

ক্যাম্পস এর নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ান সালেহীন বলেন, ক্যাম্পস কিডনি রোগ প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত সচেতনতার বাণী প্রচার করে যাচ্ছে। আমরা যদি কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলি তা হলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই সরকারী ও বেসরকারী পর্যায় থেকে যদি সকলে এগিয়ে আসেন তা হলে এই রোগ নিরাময় করা অনেকটাই সহজ হবে। গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত সকল আলোচকদের তাদের মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ক্যাম্পস এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

এ গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা অভিমত ব্যাক্ত করেন যে, চিকিৎসা করে নয় বরং প্রতিরোধ করেই এ রোগের প্রাদূর্ভাব প্রশমন করতে হবে আর এ জন্য সচেতনতাই একমাত্র উপায়। কিডনি রোগ প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে ক্যাম্পস এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং বিত্তবানদের এমন মহৎ কাজে সহযোগীতার আহবান জানান।

এ ছাড়াও গোলটেবিল বৈঠকে দেশের সরকারী পর্যায়ের নীতি নির্ধারক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ক্রীড়াবিদসহ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ ফলো করুন

Categories