বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থী পরিষদের আন্দোলন, অবরুদ্ধ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করছেন ! জেনে নিন ক্ষতি কতটা ! সব হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ঘোষণা চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, জরুরি বিভাগসহ সব সেবা বন্ধ ঢামেকে চিকিৎসা সেবায় অবহেলা করলেই আইনানুগ ব্যবস্থা -স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ স্বাস্থ্যের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন ছড়িয়ে পড়ছে এমপক্স ভাইরাস, বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ডব্লিওএইচওর ঢাকা মেডিকেলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ! পঞ্চগড়ে আন্তর্জাতিক মানের সুপার-স্পেশালিটি হেলথ-কেয়ার “নর্থ পয়েন্ট মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল-এনপিএমসিএইচ” বাজারে ৬৫ হাজার টাকার ‘ভুয়া’ ক্যান্সার ইনজেকশন

বেসরকারি মেডিক্যালে ভর্তিতে অটোমেশন বাতিলের দাবি

মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে অটোমেশন পদ্ধতির কারণে বিপাকে পড়েছে দেশের সকল বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীসহ কলেজ কর্তৃপক্ষ। চলতি ২০২০-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশের ৬৭টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীর ৬ হাজার ২০৮টি আসনের মধ্যে প্রায় ১ হাজার থেকে ১২০০ আসন এখনো শূন্য আছে। ফলে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে অটোমেশন পদ্ধতি বাতিলের দাবি করেছে প্রাইভেট মেডিক্যালে কলেজ অ্যাসোসিয়েশন।

শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং ভর্তি প্রক্রিয়ায় চলমান শিক্ষার্থী সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ দাবি করেন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের মালিকদের এ সংগঠন।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. রোকেয়া সুলতানা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন, সাবেক মুখ্য সচিব, আব্দুল করিম, সাচিপেরর সভাপতি অধ্যাপক জামালুদ্দিন, বিশ্ব ব্যাংকের সাউথ আফ্রিকার হেড অব এডুকেশন ড. মোখলেসুর রহমান, বিপিএমসিএ’র সভাপতি এম. এ. মুবিন খান, সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার হোসেন খান, ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান ড. শাহ্ মো. সেলিম, সংগঠনের সাবেক সভাপতি ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন, সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ হাবিবুল হক, পপুলার মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান, আদ-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আফিকুর রহমান, সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. রিফায়েতউল্লাহ শরীফ, মুন্নু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিনিধি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভাইস-চেয়ারম্যান সাইমুম সাইরাস, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম প্রমুখ।

বেসরকারি মেডিক্যালে মানসম্মত শিক্ষা ও চিকিৎসার ওপর জোর দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. রোকেয়া সুলতানা। তিনি বলেন, কোয়ালিটি মেনটেইন করতে হবে। কোয়ালিটি মেনটেইন না করলে কারোই কাজ করা উচিৎ না। শিক্ষা পদ্ধতি ও হাসপাতাল পরিচালনাতেও এই কোয়ালিটি চাই।

তিনি বলেন, অটোমেশন নতুন কোনো ব্যবস্থা না, এটা পাকিস্তান আমলেও ছিলো। এ পদ্ধতির কারণে অনেকে ভর্তিতে সমস্যা বোধ করছে। আমি নিজেও এটার শিকার। এই অটোমেশনের কারণে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারিনি। তবে অটোমেশনের জন্য শিক্ষার্থী আসছে না, এটা মনে হয় সঠিক নয়। শিক্ষার্থী কম আসার অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় হাসপাতালে গেছি। কম বেশি ভালো-খারাপ সব জায়গায়ই আছে। আমাদের দেশের মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা হাসপাতাল পরিদর্শনে গেলে লোকজন সাথে নিয়ে পরিদর্শনে যান। তখন হাসপাতাল, ডাক্তারদের নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। হাসপাতালে পরিদর্শনে গেলে লোকজন সঙ্গে না নেয়ার পরামর্শ দেন সাবেক এই মন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালের ডাক্তারদের কোয়ালিটি ভালো। হাসপাতালের ওপর মানুষের আস্থা আনতে হবে, কম্পিটিশন বাড়াতে হবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোয়ালিটি বাড়লে মানুষ এমনিতেই প্রতিদান দিবে।

মূল প্রবন্ধে বিপিএমসিএ’র সভাপতি এম এ মুবিন খান বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশে সরকারের একার পক্ষে সবার চিকিৎসা-শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চিকিৎসা-শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি মেডিক্যাল চালু হাওয়ার পর সব সময় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ভর্তিতে পছন্দমতো মেডিক্যাল কলেজে মেধার ভিত্তিতে সুযোগ পেয়ে আসছিলেন। পূর্বের ভর্তির নিয়ম অনুযায়ী সারা দেশে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। এতে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারতেন। গত বছর বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির ব্যাপারে বিস্ময়কর পরিবর্তন আনা হয়। মেডিক্যাল শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের নামে সংশ্লিষ্টদের তীব্র বিরোধিতার মধ্যে গত বছর অটোমেশন চালু করা হয়। এই পদ্ধতি চলতি বছর অব্যাহত রাখা হয়েছে।

এ বছর বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ১ হাজার ২০০ সিট খালি রয়েছে। এমনকি মেডিকেল কলেজগুলোর অর্ধেকেরও বেশি আসনই ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটি হুমকির মুখে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন।

এম এ মুবিন খান বলেন, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ সেক্টর ধ্বংস করার নীলনকশা করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে প্রতিষ্ঠান গড়া কঠিন, ধ্বংস করা সহজ। প্রাইভেট সেক্টরে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা নিজের চয়েজমতো ভর্তি হবেন। কিন্তু অটোমেশনের কারণে তারা তা পারছেন না। এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবাই হতাশ। হাত-পা বেঁধে পানিতে সাঁতার কাটতে দেয়ার মতো অবস্থায় অটোমেশন। যার জন্য এই পেশায় আসতে শিক্ষার্থীরা নিরুত্সাহিত হচ্ছেন। অটোমেশনের নামে এই সেক্টরকে ধ্বংস করার অপপ্রয়াস চলছে।

সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ হাবিবুল হক বলেন, অটোমেশন পদ্ধতিটি অন্য দেশ থেকে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এটি নিজেদের ক্ষেত্রে প্রয়োগের বিষয়ে অন্য দেশের পরিস্থিতি আর আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করা হয়নি। অন্য দেশে এক আসনের বিপরীতে ১০ জন পরীক্ষা দেয়। সেখানে অটোমেশন প্রয়োজন। আমাদের দেশে তো সে রকম না। এখানে কয়েকটা সিটের বিপরীতে একজন আগ্রহী।

বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর মালিকপক্ষ বলছেন, প্রাইভেট সেক্টর ধ্বংস করার জন্য অটোমেশন চালু করা হয়েছে। সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারের ব্যবস্থাপনাও চাহিদার তুলনায় সীমিত। এই সুযোগে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলকে দুষ্টচক্র ভুল বুঝিয়ে অটোমেশন চালু করেছে। শিক্ষার মান রক্ষায় নিজেদের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি অনেক নামিদামি বেসরকারি হাসপাতাল আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত কিংবা বেশির ভাগ বিত্তশালী এখন দেশেই চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি মেডিক্যাল সেক্টর মান নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা মানে না। টাকার বিনিময়ে ভর্তি করা হয়। এ কারণে মান নিয়ন্ত্রণ ও সত্যিকার অর্থে যারা মেধাবী, তাঁদের পড়ার সুযোগ করে দিতে অটোমেশন চালু করেছি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, কিছু অযোগ্য, অদক্ষ ও ঘুষখোর কর্মকর্তার কারণে সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতাল অনুমোদনে সবকিছু ফুলফিল দেখেই লাইসেন্স দেয়া হয়। নিয়মনীতি না মানলে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। সেটা

বাস্তবায়ন না করে বেসরকারিতে গুণগত মান নেই- এমন অভিযোগ তুলে অটোমেশন চালু করা হয়। অটোমেশনে বলা হয়েছে, একটা সিটেরজন্য পাঁচজন ছাত্র থাকবে। মানে ২৫ হাজার সিরিয়ালের মধ্যে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারবে। সিরিয়াল নম্বর ৪৯ হাজারের বেশি দিয়েও চলতি বছর এখনো ১ হাজার ২০০ সিট খালি আছে। এই অবস্থা দেখে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের দাবির মুখে ভর্তির পোর্টাল খুলে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু কেউ যোগাযোগ করে না। বিদেশি শিক্ষার্থীরাও আসছেন না। অথচ অটোমেশন চালু করার আগে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মেডিক্যালে পড়তে আসতেন শিক্ষার্থীরা। এটা নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম বলেন, শুধুমাত্র সরকারি কলেজ দিয়ে মেডিকেল চাহিদা মেটানো সম্ভব না। সারাবিশ্বে বেসরকারি মেডিকেলের গুরুত্ব আছে। বাংলাদেশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে পছন্দ থাকা দরকার। অটোমেশন পদ্ধতি খারাপ না। তবে কিছু পরিবর্তন আনা যায় নাকি তা দেখা দরকার। এজন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর সাথে কথা বলা যেতে পারে। মেডিকেলে ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, মেডিকেল ভর্তি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অনেকে বিরক্ত হয়ে দেশের বাইরে চলে যায়। ভর্তি পরীক্ষার দ্রুততম সময় শেষ করা উচিত বলে মনে করি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ ফলো করুন

Categories