ডেঙ্গুতে মৃত্যু আর আক্রান্তের হারে কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না দেশে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। আগস্টের পর চলতি মাসের প্রথম দুই দিনেই প্রাণ গেছে ২৫ জনের। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট মতে, মৃত্যুহারে বাংলাদেশের ধারের কাছে নেই অন্য কোনো দেশ।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু আর আক্রান্ত নিয়ে কথা হয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদের সাথে। তাঁর মতে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে জনস্বাস্থ্য ও মানুষের জীবনের ঝুঁকি সকল ক্ষেত্রে তার প্রভাবটা পড়বে। এটি নিয়ে আমরা চিন্তিত; সামনের দিনগুলো বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হবে, সেটা নিয়ে শঙ্কা জাগাচ্ছে।
তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে কমবে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। সেক্ষেত্রে আগামীতে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়বে আরও। নিয়ন্ত্রণে শুধু মশক নিধন কর্মসূচি যথেষ্ট নয় কাজে লাগাতে হবে বিশেষজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ দলকেও।
তিনি আরও বলেন, কীটতত্ত্ববিদদের অধীনে আমরা যদি মশক নিয়ন্ত্রণে ল্যাবরেটরি তৈরি করতে পারি, কীটতত্ত্ববিদদের তত্ত্বাবধানে কিটনাশক ব্যবহার করতে পারি, উদ্ভাবনা গ্রহণ করা হয়, কারিগরি বিভিন্ন দিক যদি প্রযোগ করা হয়, তাহলে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। তা না হলে এটি সম্ভব নয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া হিসেবে সারাদেশে একদিনে রেকর্ড গতকাল শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা এযাবতকালে একদিনে সর্বোচ্চ। এ যখন অবস্থা তখন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে চরম উদাসীনতা। অনেকের বেডেই নেই মশারি টাঙানোর ব্যবস্থা। মশারি ছাড়া ঘুমিয়ে আছেন রোগীরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১৮ জনে।
গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টার বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, সবশেষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৩৫২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৯৮২ এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৬৭ জন রয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৯৪ জনে। এদিকে বর্তমানে ৮ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন মোট ১১ লাখ ৮ হাজার ৪০৪ জন।
২০২২ সালে ডেঙ্গুতে মোট ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একইসঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে এবার সব রেকর্ড ভেঙে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আরও খারাপ পরিস্থিতি দেখতে হতে পারে।