মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৮ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করছেন ! জেনে নিন ক্ষতি কতটা ! সব হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ঘোষণা চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, জরুরি বিভাগসহ সব সেবা বন্ধ ঢামেকে চিকিৎসা সেবায় অবহেলা করলেই আইনানুগ ব্যবস্থা -স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ স্বাস্থ্যের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন ছড়িয়ে পড়ছে এমপক্স ভাইরাস, বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ডব্লিওএইচওর ঢাকা মেডিকেলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ! পঞ্চগড়ে আন্তর্জাতিক মানের সুপার-স্পেশালিটি হেলথ-কেয়ার “নর্থ পয়েন্ট মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল-এনপিএমসিএইচ” বাজারে ৬৫ হাজার টাকার ‘ভুয়া’ ক্যান্সার ইনজেকশন দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে

বিশ্বব্যাপী নতুন আতঙ্ক মাংকিপক্স, জরুরি বৈঠকে ডব্লিউএইচও

সমগ্র বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে মাংকিপক্স নামের বিরল রোগ, আতঙ্কিত মানুষ। কীভাবে এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব কিংবা কী পদ্ধতিতে এর মোকাবেলা করা যায়, তা নিয়ে জরুরি আলোচনা ও গবেষণা চলমান রেখেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিষয়টি নিয়ে গত শুক্রবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসেরা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

মাংকিপক্সে আক্রান্ত রোগী দেহে গুটি

মাংকিপক্স কী? কতটা ভয়াবহ এই ভাইরাস? মাংকিপক্স ভাইরাস বায়ুবাহিত। এই ভাইরাসের জেরে যে রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, তাকেই মাংকিপক্স বলা হচ্ছে। এই রোগ হলে জ্বরে ভোগেন অনেকে। দেহে তৈরি হয় বড় বড় ফোস্কা। বর্তমানে টিকাকরণের জন্য স্মলপক্স অনেকটাই সেরে উঠেছে। এখনও পশ্চিম আফ্রিকাসহ একাধিক দেশে মাংকিপক্সের দেখা পাওয়া যায়।

১৯৫৮ সালে প্রথম মাংকিপক্স পাওয়া গিয়েছিল। মূলত ইঁদুর থেকেই এই ভাইরাস ছড়ায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। তবে মূল চিন্তার বিষয় একজন আক্রান্তের থেকে মাংকিপক্স অন্য ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই রোগ থেকে স্মলপক্স অনেকটাই আলাদা। মাংকিপক্সে আক্রান্তদের দেহে বড়বড় ফোস্কা পড়ে।

মাংকিপক্স এবং এরইমধ্যে পৃথিবীর ১২টি দেশে ৮০ জনের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
যার মধ্যে রয়েছে নয়টি ইউরোপিয়ান দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া।

এখন পর্যন্ত বাস্তবতা কি ? এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কি সময় এসেছে? করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে থেকেও বেঁচে যাওয়ার পর অনেকে আতঙ্কিত হয়েছেন ।

তবে এখন পর্যন্ত এটা পরিষ্কার যে ‘মাংকিপক্স’ কোভিডের মতো নয় এবং খুব শীঘ্রই এর কারণে লকডাউন ঘোষণা হতে পারে বিষয়টা এমন না হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এর আচরণ কিছুটা অস্বাভাবিক।

তবে মাংকিপক্সের এই প্রাদুর্ভাব অস্বাভাবিক এবং অভূতপূর্ব। যার কারণে এই অসুখ বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ছে বিরল রোগ মাংকিপক্স পৃথিবীর ১২টি দেশে ৮০ জনের দেহে মাংকিপক্স পাওয়া গেছে যেকোনো ভাইরাসের আচরণ পরিবর্তন উদ্বেগের বিষয়।

এতদিন পর্যন্ত মাংকিপক্সের আচরণ অনুমান করা সহজ ছিল। নাম শুনে বানরের কথা মনে হলেও আসছে মাংকিপক্স ভাইরাসটি পাওয়া যায় ইঁদুরের শরীরে।

ভাইরাসটির প্রাকৃতিক আবাসভূমি পশ্চিম আফ্রিকা এবং রেইনফরেস্টে বাস করে এমন কেউ হয়ত আক্রান্ত ইঁদুরের সংক্রমণে এলে অসুখটি ছড়ায়।

মাংকিপক্সের গুটির চেহারা

আক্রান্তদের ত্বকে বসন্তের মতো দেখা দেয়। ফোস্কার মতো তৈরি হয়ে ফেটে যায় এবং চামড়া উঠতে থাকে। কিন্তু মাংকিপক্স এখন যেসব দেশে পাওয়া যাচ্ছে সেখানে এটি থাকার কথা নয়। এর প্রাদুর্ভাব এখনো স্বল্প পরিসরেই রয়েছে।
ভাইরাসটি খুব অল্পতেই সংক্রমিত করতে পারছে না। দীর্ঘক্ষণের সংস্পর্শ দরকার হচ্ছে।

বিশ্বে এর আগে অল্প কিছু সংক্রমণ পাওয়া গেছে তবে যাদের শরীরে এটি পাওয়া গেছে তারা সবাই ভাইরাসটির প্রাকৃতিক আবাসভূমি যেসব দেশে সেখানে ভ্রমণে গিয়েছিলেন।

কিন্তু এবার যে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে তাতে প্রথমবারের মতো এমন সব মানুষের দেহে এটি পাওয়া গেছে যাদের সাথে পশ্চিম অথবা মধ্য আফ্রিকার কোন যোগাযোগও নেই। ফলে কিভাবে তারা আক্রান্ত হয়েছেন সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। এর আগে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের কিছু জায়গায় এর সংক্রমণ পাওয়া গেছে। যাদের সবার সাথে প্রাকৃতিক আবাসভূমিতে ভ্রমণের সম্পর্ক রয়েছে।

কিন্তু এবার বিষয়টি তেমন নয়। গুটি বসন্তের শেষ মহামারির ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ আর জলবসন্তের পার্থক্য যেভাবে বুঝবেন প্রথমবারের মতো এমন আক্রান্ত এমন ব্যক্তি পাওয়া যাচ্ছে যাদের সাথে যাদের সাথে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার সাথে কোন যোগাযোগ নেই।

তারা কিভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। এটি যৌন সংসর্গের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। বেশিরভাগ আক্রান্তের যৌনাঙ্গ এবং এর আশপাশে ঘায়ের মতো পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্তদের অনেকেই সমকামী ও উভকামী কম বয়স্ক পুরুষ।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিজ্ঞান বিষয় ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক স্যার পিটার হরবি বলছেন, “আমরা খুব নতুন এক ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। যা খুব বিস্ময় এবং উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো।”

তিনি বলছেন, আমরা দ্বিতীয় এক কোভিড মহামারিতে পড়তে যাচ্ছি ব্যাপারটা এমন না। তবে ভাইরাসটি জেঁকে বসার আগেই দ্রুত পদক্ষেপ নেবার কথা বলছেন তিনি। এটা এমন কিছু যা আমাদের এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ, বলছেন স্যার হরবি।

তাহলে কি হচ্ছে?
এখনো পর্যন্ত এটুকু জানা যাচ্ছে যে এই প্রাদুর্ভাব ব্যতিক্রমী কিন্তু কেন সেটি জানা যাচ্ছে না। দুটো বিকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে। হতে পারে ভাইরাসটি পরিবর্তিত হয়েছে। অথবা ভাইরাসটি বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য সঠিক সময়ে উৎকৃষ্ট পরিবেশ পেয়েছে।

তবে মাংকিপক্স কোভিডের মতো এত দ্রুত মিউটেড বা ধরন পরিবর্তন করে না। দুই হাজার আঠারো ও ২০১৯ সালে যে কয়েকটি সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল তার সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। যদিও নিশ্চিত করে কিছুই এত তাড়াতাড়ি বলা যাচ্ছে না। তবে এখনো পর্যন্ত এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে ভাইরাসটি ধরন পরিবর্তন করেছে।

তবে বড় ধরনের প্রাদুর্ভাবের জন্য সবসময় ভাইরাসের ধরন পরিবর্তন হতে হবে এমন নয়। যেমনটা দেখা গেছে ইবোলা এবং জিকা ভাইরাসের সংক্রমণে।

সমকামী ও উভকামী কম বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে মাংকিপক্স কেন বেশি পাওয়া যাচ্ছে তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে প্রশ্ন উঠছে যৌন আচরণের কারণে কি এটি দ্রুত ছড়ায়?

কোন যোগাযোগ নেই এমন মানুষদের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়ানোর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে যে দীর্ঘদিন যাবৎ ভাইরাসটি হয়ত মানুষের মধ্যেই ছিল, ধীরে ধীরে জেঁকে বসছিল যা নজর এড়িয়ে গেছে। যাই হোক সামনে হয়ত আমরা আরো সংক্রমিত ব্যক্তি পাবো।

লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের অধ্যাপক জিমি হোয়াইটওয়ার্থ বলছেন, “আমার মনে হয় না সাধারণ মানুষের এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে। তবে আমরা এটি সম্পর্কে পুরোটা উদঘাটন করে উঠতে পারিনি এবং বিষয়টি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।”

তবে কোভিডের সময় যেমন ছিল এই ভাইরাসটির ক্ষেত্রে পরিস্থিতি একই রকম নয়।

মাংকিপক্স পরিচিত ভাইরাস এবং এর চিকিৎসা ও টিকা ইতিমধ্যেই রয়েছে।

এর লক্ষণ হালকা হলেও শিশু, গর্ভবতী নারী এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে মাংকিপক্স বিপজ্জনক।

  • এটি কোভিডের চেয়ে ধীরে ছড়ায়।
  • এর সংক্রমণে ত্বকে যে ফোস্কা দেখা দেয় সেকারণে লক্ষণগুলো ধরা সহজ।

যার কারণে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত করা এবং ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের টিকা দেয়া সহজ হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ অঞ্চলের পরিচালক হানস ক্লুগ যদিও সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, “গ্রীষ্মকাল (ইউরোপে) যত এগিয়ে আসবে…গণজমায়েত, উৎসব, অনুষ্ঠান হবে, আমি উদ্বিগ্ন যে তাতে সংক্রমণ হয়ত ত্বরান্বিত হতে পারে।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ ফলো করুন

Categories